বাংলা৭১নিউজ,(নওগাঁ)প্রতিনিধি: সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করতে বায়োমেট্রিক হাজিরা সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরই ধারাবাহিকতায় নওগাঁ সদর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে। বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে এসব মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনার স্পেসিফিকেশন উল্লেখ করে বলা হয়- বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাজার থেকে যাচাই করে সাশ্রয়ী মূল্যে নিজেদের পছন্দ মতো ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয় করে স্কুলে স্থাপন করবে। কিন্তু ইউএনও’র দেখানো নির্দিষ্ট দোকান থেকে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কিনতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলায় ১৩৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে স্লিপের ফান্ড থেকে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনার জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বাজার যাচাই করে মেশিন ক্রয়ের কথা থাকলেও ইউএনও’র নির্দেশে নওগাঁ শহরের ‘তাসনুভা কম্পিউটার’ থেকে কিনেছেন। এসব মেশিনের বাজারদর জানা নেই শিক্ষকদের। এছাড়াও সুযোগ মেলেনি দরদাম করার।
ফলে ইউএনও’র দেখানো দোকানে বিদ্যালয়গুলো ১৭ হাজার টাকা করে পরিশোধ করে। পরবর্তীতে দোকানের লোকজন ‘টিম্মি টিএম-৬০ মডেলের’ ডিজিটাল হাজিরা মেশিনটি বিদ্যালয়ে গিয়ে লাগিয়ে দেয়। অথচ এ মেশিনটির বাজার মূল্য আনুষঙ্গিক খরচসহ সাড়ে ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। প্রতিটি মেশিন ক্রয়ে ৭ হাজার থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা অনিয়ম করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে বিদ্যালয়গুলোতে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন লাগানো হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা সিস্টেম চালু হলেও অধিকাংশ বিদ্যালয়ে চালু হয়নি।
শালুকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিলি জেসমিন খানম বলেন, মাসিক মিটিংয়ে ইউএনও স্যার আমাদের ‘তাসনুভা কম্পিউটার’ নামে একটা দোকান নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। পরে দোকানে ১৭ হাজার টাকা জমা দেয়া হয়। কিছুদিন আগে বিদ্যালয়ে এসে মেশিনটি লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে এখনও কার্যক্রম শুরু করা হয়নি।
কুশাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম রুহুল আমিন বলেন, স্কুলের উন্নয়নে জন্য স্লিপের ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছিলাম। এর মধ্যে ৩ হাজার ২৪৫ টাকা ভ্যাট কাটা হয়েছে। ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনার জন্য ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ রেখেছিলাম। কিন্তু সেখানে আরও ২ হাজার টাকা বেশি লেগেছে। আমরা তো বাজার যাচাইয়ের সুযোগ পাইনি। এছাড়াও অফিসের বাইরে তো আমরা যেতে পারি না। মেশিন লাগানোর পর থেকে আমরা বায়োমেট্রিক হাজিরা কার্যক্রম শুরু করেছি।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাকছুয়ারা বেগম বলেন, যেহেতু ওপর থেকে নির্দেশনা আছে। সেক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার নেই। এক প্রকার বাধ্যতামূলকভাবে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। যদি বাজার যাচাই করার সুযোগ থাকতো তাহলে হয়ত কিছু কম দামে মেশিনটি পেতাম। সেই টাকা স্কুলের উন্নয়ন কাজে ব্যয় করতে পারতাম।
ঢাকার ত্রিমাত্রিক মাল্টিমিডিয়ার সেলসম্যান ফাহিম বলেন, সার্ভিসিং সুবিধাসহ ‘টিম্মি টিএম-৬০ মডেলের’ দাম সাড়ে ৭ হাজার টাকা। এর সঙ্গে সফটওয়্যার ফি দুই হাজার টাকা এবং ইনস্টল ফি এক হাজার টাকা। পাইকারী বা খুচরা যেটাই হোক কেন একই দাম।
নওগাঁ সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাইয়ার সুলতানা বলেন, গত বছরের অক্টোবরে মাসিক মিটিং ছিল। সেখানে ইউএনও স্যার ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনার জন্য শিক্ষকদের বলেছিলেন। সে মিটিংয়ে আমিও উপস্থিত ছিলাম। তবে এখানে আমার কোনো এখতিয়ার নেই। এ বিষয়ে ইউএনও স্যার ভালো জানেন। কারণ শিক্ষকদের আমি নিজ দায়িত্বে মেশিন কিনতে বলেছিলাম।
তবে নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মেশিন ক্রয়ে কোনো অনিয়ম করা করা হয়নি। বাজারে সব জায়গায় মেশিনের দাম একই। কিন্তু সফটওয়্যারের কারণে খরচ কিছুটা বেশি পড়েছে। আমি মনে করি এটি বাংলাদেশের বেস্ট সফটওয়্যার। আমি শুধু বলেছি আমাদের সুবিধার জন্য একই সফটওয়্যার হতে হবে। আর শিক্ষকরাই মেশিন কিনেছেন। এখন যদি তারা গা বাঁচায় তাহলে তো হবে না।
বাংলা৭১নিউজ/জেআই