বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিক জিয়া ইসলামের চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর অ্যাপেলো হাসপাতালের বিরুদ্ধে। তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর আগে মাথার খুলির একাংশ রেখে দেয়া হয় ভুলে। পরে এই হাসপাতাল থেকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো অন্য একটি রোগীর সঙ্গে করে খুলির সেই অংশটি পাঠানো হয়।
গত ৯ জানুয়ারি রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলের সামনে গাড়িচাপায় আহত হয়েছিলেন মোটরসাইকেল আরোহী জিয়া ইসলাম। সেখান থেকে তাকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ১০ জানুয়ারি জিয়াকে নেয়া হয় অ্যাপোলো হাসপাতালে। সেদিনই তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়।
এজন্য মাথার খুলি কাটা হয়। পরে অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় জিয়াকে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে যাওয়ার পরই তার মাথার খুলির একাংশ না থাকার বিষয়টি প্রকাশ পায়।
ঢাকায় থাকতেই জিয়ার ফুসফুসে সংক্রমণ হয়। কিন্তু এটি ধরা পড়ে তার সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শুরুর পর। এর কারণে গত ১৬ জানুয়ারি সংক্রমণ নিরোধে গ্লিনিগালস হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয় তার ফুসফুসে। এ সময় তার মাথার খুলির বামপাশটা দেখতে পাননি চিকিৎসকরা। এরপর সিঙ্গাপুর থেকে বিষয়টি জানানো হয় ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে।
জিয়া ইসলামের সঙ্গে সিঙ্গাপুর গেছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি কামরুল হাসান। তিনি বলেন, ‘অপারেশনের সময় খুলির এই অংশটা ফ্রিজে রাখতে হয়। অ্যাপোলো হাসপাতাল সেটাই করেছিল। কিন্তু সিঙ্গাপুরে পাঠানোর সময় সেটা দিতে ভুলে গিয়েছিল। পরে আরেকটা অ্যাম্বুলেন্সে করে তা পাঠানো হয়।’
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক তসলিম চৌধুরীকে চিকিৎসার জন্যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এই অ্যাম্বুলেন্সে করেই জিয়ার খুলির একাংশ সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়।
একজন মৃত্যু পথযাত্রী রোগীর খুলি রেখে দেয়ার মতো ঘটনা কীভাবে ঘটলো-এ বিষয়ে জানতে অনেক চেষ্টা করেও অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
হাসপাতালের ওয়েবসাইটে থাকা একধিক নম্বরে ফোন করেও কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে ডিউটি ম্যানেজারের ফোন নম্বরে কল করলে একজন ধরেন। তিনি তার নাম বলেন মোস্তবা আলী মাসুম। জিয়া ইসলামের খুলি রেখে দেয়ার ঘটনাটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে কে বক্তব্য দেবেন-সেটাও তিনি বলেননি। তাহলে আমরা কী লিখবো-জানতে চাইলে জনাব মাসুম বলেন, ‘আজ সপ্তাহিক ছুটির দিন। আপনি আগামীকাল যোগাযোগ করেন, তাহলেই তথ্য পেতে পারেন।’
জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক অসিত চন্দ্র সরকার বলেন, ‘মানুষের মাথায় আঘাত লাগলে ব্রেন ফুলে যায়। এ জন্য ব্রেনকে জায়গা করে দিতে হাড়ের অংশ খুলে রাখা হয়। আর এই অংশটি মানুষের শরীরের ভেতরে বা বাইরে কোথাও রাখা যায়। কোথায় রাখা হয়েছে সেটা অপারেশর করার সময় নোটে লিখা থাকে।’
এই চিকিৎসক বলেন, ‘জিয়া ইসলামের অপারেশন করেছেন অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তারা খুলি কোথায় রেখেছেন, সেটাও নোটে থাকার কথা। এখন এটা রোগীকে পাঠানোর সময় কেন দেয়া হয়নি, সেটা তারাই বলতে পারবেন।’
বাংলা৭১নিউজ/বিকে