বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: জাকির নাইকের ‘পীস টিভি’ এর সম্প্রচার বন্ধ করতে শুরু করেছে ভারত। বাংলাদেশের অনুরোধেই এই টিভি’র সম্প্রচার বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিবিসি’র কলকা্তা সংবাদদাতা অমিতাভ ভট্টশালী এর প্রতিবেদনেে একথা বলা হয়।
বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়-বিতর্কিত ইসলাম ধর্ম প্রচারক জাকির নাইকের ‘পীস টিভি’তে, তার সম্প্রচার বন্ধ করতে শুরু করেছে ভারত।
শনিবার রাত থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় হামলাকারীরা এই চ্যানেলটি দেখেই সন্ত্রাসে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল, এরকম একটি খবর সামনে আসার পরেই ‘পীস টি ভি’-র সম্প্রচার নিয়ে ঢাকা থেকে দিল্লিতে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
ভারতে ‘পীস টি ভি’-র সম্প্রচার করার অনুমতি নেই। তবুও বেআইনীভাবে অনেক কেবল অপারেটর এই চ্যানেলটি সম্প্রচার করেন স্থানীয় মুসলমান দর্শকদের চাপে।
জাকির নাইক ভারতের যে মুম্বই শহরের বাসিন্দা আর তাঁর পরিচালিত যে ট্রাস্ট এই টি ভি পরিচালনা করে, সেখানকার পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্ত দল তৈরী হয়েছে পীস টিভির কার্যক্রম খতিয়ে দেখার জন্য।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও পীস টি ভিতে প্রচারিত জাকির নাইকের বক্তব্যগুলি খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে, সেগুলোতে কোনওভাভে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন বা তার প্রচারণা চালানো হয়েছে কী না, সেটা জানতে।
কলকাতার কয়েকটি এলাকায় শনিবার ভারতীয় সময় রাত সাড়ে নটা পর্যন্তও পীস টি ভি দেখা যাচ্ছিল, তবে তারপরেই হঠাৎ সেটি বন্ধ হয়ে যায় বলে বিবিসি কে জানিয়েছেন মুসলমান প্রধান ট্যাংরা অঞলের এক বাসিন্দা।
বেআইনীভাবে পীস টিভি-র যে সম্প্রচার চলছে, সেই ছবিও তিনি বিবিসি-কে পাঠিয়েছেন নাম উল্লেখ না করার শর্তে।
পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু দপ্তরের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বিবিসিকে বলেছেন, “জাকির নাইক এমন কিছু বলে থাকেন, যা ইসলামী শাস্ত্রমতে ঠিক নয়। এর ফলে যুব সমাজ উৎক্ত হচ্ছে আর আইন-শৃঙ্খলা, সংবিধানকে ডিঙিয়ে কিছু করার কথা ভাবছে, তাদের মগজ গরম হয়ে যাচ্ছে।“
কলকাতার স্থানীয় কেবল টি ভি অপারেটরা বলছেন শনিবারই থানা থেকে তাদের বলা হয়েছে ওই চ্যানেলের বেআইনী সম্প্রচার বন্ধ করে দিতে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের পুলিশও একই নির্দেশ দিচ্ছে স্থানীয় কেবল টি ভি অপারেটদের।
মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভুপালের অন্তত দুজন কেবল অপারেটর এই নির্দেশ আসার কথা নিশ্চিত করেছেন বিবিসি বাংলাকে। তাঁরা এটাও জানিয়েছেন যে পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশ আসার পরেই পীস টিভি-র সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা।
বিশ্বের অন্যান্য কয়েকটি দেশেও জাকির নাইকের ‘পীস টি ভি’ সম্প্রচার নিষিদ্ধ। মি. নাইককে তাঁর সম্প্রচারিত ভাষণের জন্য দেশে ঢুকতে দেয় না কানাডা, যুক্তরাজ্যের মতো বেশ কয়েকটি দেশ। শনিবারই কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক জানিয়েছে যে ওই চ্যানেলটি ভারতে ডাউনলোড করার আইনী অনুমতি নেই।
মন্ত্রকের উপসচিব শঙ্কর লালকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম রিপোর্ট করছে যে “কোনওভাবে যদি ওই চ্যানেলটি ভারতের কোথাও বে আইনী ভাবে সম্প্রচার করা হয়, তাহলে ‘কেবল টি ভি রুলস্’ এর ৬(৬) ধারায় তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। মি. নাইকের সম্প্রচারিত ভাষণগুলি আদৌ সন্ত্রাসবাদকে উস্কানি দেয় কী না, তা নিয়ে ভারতে বিতর্ক রয়েছে।
মৌলবী, মওলানাদের একটা বড় অংশই মি. জাকির নাইকের মতামতকে মান্যতা দিতে চান না। কিন্তু ভারত শাসিত কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নেতারা মনে করেন মি. নাইকের বিরুদ্ধে একটা সংগঠিত ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
বিশ্বখ্যাত দেওবান্দী ঘরাণার ধর্মপ্রচারক ও বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলছিলেন, “মি. নাইক কোনও স্বীকৃত ইসলামিক প্রতিষ্ঠানে পড়েন নি। নিজেই পড়াশোনা করেছেন ইসলামের ব্যাপারে। তিনি অনেক কিছুই বলেন যা যুবসমাজকে উৎক্ত করছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।“
মি. চৌধুরী আরও বলছিলেন যে বছর চারেক আগেই দেওবন্ধ থেকে একটা ফতোয়া দেওয়া হয়েছে , “মানব বোমায় হত হওয়া অথবা নিরীহ মানুষকে বোম বা অস্ত্র দিয়ে খতম করা, পরের জীবনকে কেড়ে নেওয়া নিষিদ্ধ এবং হারাম।“
আরেক জনপ্রিয় ‘বেরলভি’ ঘরাণার মুসলামানরাও মনে করেন যে জাকির নাইক ইসলামের ক্ষতি করছেন।
ঈদের খুতবা দেওয়ার সময়ে ওই ঘরাণার মৌলবীরা জাকির নাইকের বক্তব্য না মানার জন্য আবেদন করেছেন আর সরকারের কাছে ওই চ্যানেল সম্পসারণ বন্ধের আবেদনও করেছেন।
তবে ভারত শাসিত কাশ্মীরের মুসলমান নেতারা মনে করছেন যে জাকির নাইকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে হিন্দুত্ববাদী বি জে পি।
হুরিয়ত কনফারেন্সের নেতা সঈদ আলি শাহ গিলানী বলছেন জাকির নাইক ইসলামের মূলমন্ত্র প্রচার করছে কিন্তু আর এস এস ষড়যন্ত্র করছে এটা বন্ধ করার।
জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট বা জে কে এল এফের নেতা মুহাম্মদ ইয়াসিন মালিকের এক বিবৃতিতে বলেছেন, “কেউ যদি বলেও থাকে উনার বক্তব্য ভালো লেগেছে, তার ভিত্তিতেই মুসলিম বিরোধী ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম উইচ হান্ট শুরু করে দিয়েছে। হাস্যকর ব্যাপার!”
মিস্টার জাকির নাইক সৌদি আরবে রয়েছেন । কয়েকদিন পরেই তাঁর ভারতে ফেরার কথা। তিনি এক ভিডিয়ো ক্লিপ-এ আর তাঁর ট্রাস্টের পরিচালকরা অবশ্য বলছেন যে ‘সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন বা উস্কানি দেওয়ার প্রশ্নই নেই। তাঁর ভাষণ বিকৃত করে ইউটিউবে তোলা হয়েছে।‘
জাকির নাইক বর্তমানে সৌদি আরবে রয়েছেন। জুলাই ১১ তারিখে ফিরলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে স্বরাস্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গেছে।
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র:বিবিসি