ঝিনাইদহে মৌসুমের শুরুর দিকে বৈরি আবহাওয়ায় আশংকাজনক হারে কমেছে রবিশস্যের আবাদ। নষ্ট হয়েছে শতকরা ৮০ ভাগ জমির ফসল। এতে করে চরম লোকসানে পড়েছেন কৃষকরা। আগামীতে খেসারি, মশুর, গম, মটরসহ অন্যান্য রবিশস্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির শঙ্কা তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, গম ৪৩৫৪ হেক্টরের মধ্যে ৪০০৭ হেক্টর, সরিষা ৯১৭১ হেক্টরের মধ্যে ৭৮৩৮ হেক্টর, মশুর ৭৫৭৩ হেক্টরের মধ্যে ৬৭৫৫ হেক্টর, খেসারি ৫৮৯ হেক্টরের মধ্যে ৪৯৫ হেক্টর, মটর ৪৩৩ হেক্টরের মধ্যে ৩৮৮ হেক্টর, মরিচ ৫৮৮ হেক্টরের মধ্যে ৪৫৫ হেক্টর, আলু ১৩৭৩ হেক্টরের মধ্যে ৯৮৬ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও ক্ষতির তালিকায় অন্যান্য ফসলও রয়েছে।
রবি শস্য আবাদ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার ৪৯ হাজার ৪৪৭ জন কৃষাণ-কৃষাণী। গেল ৫ ডিসেম্বরের ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে পানি জমে থাকায় এসব ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
সাধারণত ১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময়কালকে রবি মৌসুম বলা হয়। এই সময়ের মধ্যে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয় রবিশস্যের আবাদ। যথারিতী কৃষকরা ভালো ফলনের আশায় কেউ জমি চাষ করে গম রোপণ করেছিলেন, কেউবা মশুর, সরিষা কিংবা আমন ধানের ক্ষেতে ছিটিয়ে ছিলেন খেসারির বীজ। কিন্তু বৈরি আবহাওয়াই তা নষ্ট হলে আবার তারা ক্ষেতে বীজ বপন করলেও অধিকাংশ ফসলই নষ্ট হয়ে যায়।
কোনো কোনো এলাকায় কিছুটা মশুর থাকলেও পাতা হলুদ হয়ে মরে যাচ্ছে গাছ। তবে খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি সরিষা ক্ষেত।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার যুগনী গ্রামের কৃষাণী রিনা বেগম জানান, অন্যের জমি লিজ নিয়ে ফসল চাষ করে চালান নিজের সংসার। রবি মৌসুমে ভালো ফলনের আশায় এক বিঘা জমিতে ধানের মধ্যে খেসারির বীজ ছিটিয়েছিলেন। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টিতে পানি জমে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। পানি সরে গেলে পরে ধান কেটে আবারও খেসারি বীজ ছিটালেও মাটি ভেজা থাকায় তা আর অঙ্কুরীত হয়নি। ফলে এই মৌসুমে কী করে লিজের টাকা দেবেন আর কি করে নিজের সংসার চালাবেন এ নিয়ে চিন্তায় আছেন।
একই গ্রামের কৃষক তরিকুল জোয়ারদার বলেন, ৬ বিঘা জমিতে দুই বার করে খেসারি আর কলাই বীজ ছিটিয়ে ছিলাম। এতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু ফসল নষ্ট হয়ে আমার সম্পূর্ণ টাকা লোকসান। এমন অবস্থায় সরকার থেকে কিছু সহযোগিতা না করলে খুবই দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে দিন পার করতে হবে।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজগর আলী জানান, মৌসুমের শুরুতে কৃষকরা বৈরি আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি সরে গেলে পরবর্তীতে অনেকেই আবার নতুন করে আবাদ করলেও সময় পার হয়ে যাওয়ায় সেখানেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত। এমন অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে আর্থিক কিংবা অন্যভাবে প্রণোদনা এলে তা কৃষকদের মধ্যে বন্টন করা হবে।
তিনি আরো জানান, যেহেতু এখন বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। তাই কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এই আবাদ বৃদ্ধির প্রতি উৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে রবিশস্যের উৎপাদন কম হওয়াই আগামীতে দাম বৃদ্ধির শঙ্কাও করছেন তিনি।
বাংলা৭১নিউজ/সিএফ