বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: ফ্রান্সভিত্তিকি ইসলামী জঙ্গিদের একটি দলের ভেতর ছদ্মবেশে ঢুকে পড়েন ফ্রান্সের একজন মুসলিম সাংবাদিক। উদ্দেশ্য গোপন ক্যামেরায় জঙ্গিদের কার্যক্রম ভিডিও করা।
ছয় মাস ধরে তিনি ঐ জঙ্গিদলের সাথে ছিলেন। জঙ্গিদলটি এসময় ইসলামিক স্টেট তথা আইএসের নামে প্যারিসে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। অবশেষ তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রামজি ছদ্মনাম ব্যবহার করে এই সাংবাদিক তার ‘ আল্লাহর সৈনিক’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্রের জন্য তদন্ত অভিযানটি চালান। তার এই প্রামাণ্যচিত্রটি মূলত তরুণ জিহাদিদের মনোজগতের প্রতি দৃষ্টি রেখে নির্মাণ করা হয়েছে। ২ মে সোমবার রাতে এটা দেখানো হবে।
রামজি বলেন, ‘যারা ১৩ নভেম্বরে প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছিল যাতে ১৩০ জন লোক নিহত হয়, আমি সেই তরুণ জিহাদিদের প্রজন্মেরই একজন মুসলিম। তারা আসলে কী চিন্তা করছে সেটা জানাই আমার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল।’
তিনি বলেন, তাদের এইসব কর্মকাণ্ডে আমি কখনো কোনো ইসলাম দেখিনি। পৃথিবীটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। এরা দিশেহারা, হতাশ, আত্মঘাতী আর সহজে বশমানা তরুণ ছাড়া আর কিছু নয়।
তাদের দৃর্ভাগ্য যে তারা আইএসের যুগে জন্ম নিয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। তারা এমন তরুণ যারা ভাল কিছু খুঁজছিল। কিন্তু তারা আইএসকেই খুঁজে পেয়েছে।
কিভাবে তিনি এই জঙ্গিদের দলে ঢুকলেন তার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, তাদের সাথে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে প্রথম ধাপটা ছিল বেশ সহজ। ফেসবুকে জিহাদের প্রচারণায় তাদের একটা পেজ ছিল। সেটা অনুসরণ করতে করতে এক পর্যায়ে তাদের সাথে যোগাযোগ হয়।
তারপর তাদের আমির তথা দলপতির সাথে তাকে দেখা করতে হয়। দলে দশ বারোজন যুবক ছিল। তাদের কয়েকজনের জন্ম মুসলিম পরিবারে। অন্যরা ধর্মান্তরিত।
আমির ছিল ওসামা নামে একজন তরুণ তুর্কী বংশোদ্ভূত ফ্রান্সের নাগরিক এবং তাদের প্রথম সাক্ষাতেই সে এই সাংবাদিককে প্ররোচিত করার চেষ্টা করেন যে, যদি তিনি আত্মঘাতী হামলা চালান, তাহলে তার জন্য বেহেশত নিশ্চিত। বেহেশত তার জন্যই অপেক্ষা করে আছে।
মুখে মৃদু হাসি নিয়ে ওসামা বলতে থাকে, ‘আমাদেরকে বেহেশতের দিকেই যেতে হবে। এটাই একমাত্র পথ। আসো, ভাই! চলো আমরা বেহেশতে যাই। সেখানে হুর-পরিরা আমাদের সেবা করার জন্য অপেক্ষা করছে। সেখানে তোমার একটা প্রাসাদ থাকবে। সোনার একটা ঘোড়া পাবে তুমি।’
প্যারিসের একটি মসজিদের সামনে আরেকটি সাক্ষাতের সময় দলের একজন সদস্য বুরগেট বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছে এমন একটি বিমানের দিকে রকেট লঞ্চার তাক করে বলতে থাকে, ছোট্ট একটা রকেট লঞ্চারের আঘাত হেনেই তুমি সবকিছু পেতে পার। তোমাকে ইসলামিক স্টেট তথা আইএসের নামে এমন কিছু করতে হবে যাতে ফ্রান্স এক শতাব্দীর জন্য সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।
এভাবেই দলের মধ্যে ঢুকে যান এই সাংবাদিক। তারপর তদন্ত করতে থাকেন তাদের গোপন কর্মকাণ্ড।
রামজি জানান, দলের কয়েকজন সিরিয়ার আইএস জঙ্গিদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু ওসামা সিরিয়া যাওয়ার পথে তুর্কি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এবং তাকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হয়। মুক্তি পাওয়ার আগে সে পাঁচ মাস জেল খাটে।
মুক্তির শর্ত হিসেবে দিনে একবার তাকে স্থানীয় থানায় হাজিরা দিতে হতো। গোপন সংকেতের বার্তা পাঠিয়ে তখনো দলের সাথে সে যোগাযোগ রক্ষা করতো এবং এভাবে গোপন বৈঠকের আয়োজন করে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করতো।
কোথায় আক্রমণ করা যায়, এই চিন্তাই সব সময় তাদের মনের মধ্যে কাজ করত। এমনকি খাওয়ার সময়ও তারা স্বয়ংক্রিয় বন্দুকের গুলি বের হওয়ার শব্দ নকল করত, ঠা- ঠা-ঠা-ঠা-ঠা। ওসামা বলেন, আমরা অবশ্যই একটা সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালাব।
আমাকে উদ্দেশ করে ওসামা বলে, বিএফএম, আইটেলির সাংবাদিকদের উপরও হামলা চালাব। তারা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে।
ওসামা আমাকে বলে, শার্লি এবদোর প্রতি তারা ঠিক যেভাবে আক্রমণ করেছিল, ঠিক একইভাবে এদের বুক বরাবর তোমাকে গুলি চালাতে হবে। হঠাৎ আক্রমণ করো। ফ্রেঞ্চরা হাজারে হাজারে মারা পড়বে।
রামজি জানায়, ২০১৫ সালে জানুয়ারি মাসে দুই সহোদর জঙ্গি ব্যঙ্গবিদ্রুপাত্মক ম্যাগাজিন শার্লি এবদোর অফিসে হামলা চালিয়ে ১২ জনকে হত্যা করে।
বাংলা৭১নিউজ/তথ্যসূত্র:এএফপি