ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘চেক ডিজঅনার’ মামলা করতে পারবে না বলে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের তিনটি আবেদনের শুনানির পর আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
আদালতে ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম আমিন উদ্দিন। তিনি একই সঙ্গে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।
তার সঙ্গে ছিলেন সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী। অপরপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল্লা আল বাকী।
আইনজীবী এম আমিন উদ্দিন পরে সাংবাদিকদের বলেন, “চেক ডিজঅনার মামলা নিয়ে হাইকোর্টের রায়টি দুই মাসের জন্য স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। ফলে এনআই অ্যাক্টে চেক ডিজঅনার মামলা গ্রহণে আইনগত বাধা নেই। শিগগিরই হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত লিভ টু আপিল করা হবে। ”
গত ২৩ নভেম্বর চেক ডিজঅনার মামলার বিষয়ে এ রায় দেন বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায়ে বলা হয়, ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তবে অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করা যাবে। চেক ডিজঅনার মামলায় বিচারিক আদালতে দণ্ডিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের বরাইল গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীসহ তিন জনের আপিল গ্রহন করে এ রায় দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত।
রায়ে আদালত বলেন, ব্যাংক ঋণের বিপরীতে যে ব্ল্যাঙ্ক চেক নিচ্ছে সেটা জামানত, বিনিময় যোগ্য দলিল নয়। জামানত হিসেবে নেওয়া সেই চেক দিয়ে ‘চেক ডিজঅনার’ মামলা করা যাবে না। ঋণের বিপরীতে ব্ল্যাংক চেক নেওয়াটাই বেআইনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘ দিন ধরে এই বেআইনি কাজ করে আসছে বলেও রায়ে পর্যবেক্ষণ দেন উচ্চ আদালত।
সেই সঙ্গে ঋণ আদায়ে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেক ডিজঅনার মামলা সরাসরি খারিজ করে সেসব মামলা অর্থঋণ আদালতে পাঠিয়ে দিতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেওয়া হয় রায়ে।
ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে এবং সব ধরনের ঋণে বীমা নিরাপত্তা (ইনসুরেন্স কাভারেজ) দেওয়ার নির্দেশনা জারি করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রায়ে নির্দেশ দেন আদালত।
এ রায়ের পাঁচ দিনের মাথায় তা স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে তিনটি আবেদন করে ব্র্যাক ব্যাংক। গত ২৮ নভেম্বর চেম্বার আদালত ব্র্যাক ব্যাংকের আবেদন তিনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। বৃহস্পতিবার শুনানির পর হাইকোর্টের রায়ে স্থাগিতাদেশ দিলেন সর্বোচ্চ আদালত।
এর আগে চেক ডিজঅনার মামলায় কাউকে কারাগারে পাঠানো সংবিধান পরিপন্থী বলে হাইকোর্টের অভিমত দেওয়া রায় স্থগিত করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে গত ৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার আদালত এ রায় স্থগিত করেন।
চেক ডিজঅনারসংক্রান্ত কয়েকটি মামলা নিষ্পত্তি করে গত ২৮ আগস্ট এ রায় দিয়েছিলেন বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায়ে চেক ডিজঅনার মামলায় ব্যক্তিকে জেলে পাঠানো সংবিধান পরিপন্থী ও তা অবৈধ ঘোষণা করা হয়। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, কোনো ব্যক্তিকে তাঁর ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। আর নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট (এনআই) অ্যাক্ট, ১৯৮১-এর ১৩৮ ধারায় চেক ডিজঅনার্ড মামলায় ব্যক্তিকে কারাগারে বন্দি রাখা তাঁর স্বাধীনতা হরণের শামিল।
এনআই অ্যাক্টের ১৩৮ ধারা সংশোধনের জন্য জাতীয় সংসদকে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি আদালত ধারাটি সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত এসব মামলা নিষ্পত্তিতে একটি নীতিমালাও করে দিয়েছিলেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ