বগুড়ার বিসিকে দুই নৈশ্যপ্রহরী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। শনিবার দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাছু মেটালের পিকআপ ড্রাইভার ও হেলপারের মালামাল চুরির ঘটনা জানাজানি হওয়ার ভয়ে দুই নৈশ্যপ্রহরীকে হত্যা করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- শাজাহানপুর উপজেলার মৃত মিসবাহুল মিল্লাত নান্নার ছেলে হোসাইন বিন মিল্লাত নিনজা (৩৪), নারুলী তালপট্টি এলাকার সায়েদ হামান ব্যাপারীর ছেলে সুমন ব্যাপারী (২৭) এবং একই এলাকার বদিউজ্জামানের ছেলে রাহাত (২১)।
এদের মধ্যে নিনজা মাছু মেটালের পিক আপ ড্রাইভার, রাহাত হেলপার এবং সুমন ওই মেটালের সাবেক কর্মচারী।
এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লোহার রড এবং দুইটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে পুলিশ।
রবিবার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস কনফারেন্সে এসব তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরী, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম, ডিবির ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ, সদর থানার ওসি সেলিম রেজাসহ পুলিশের ঊর্ধবতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বিসিক শিল্পনগরীর ‘মেসার্স মাছু অ্যান্ড সন্স ইন্ডাস্ট্রিজ’ এর সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতর থেকে শামছুল হক (৬০) ও আব্দুল হান্নান (৪৫) নামে নিহত দুই নৈশ প্রহরীর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত শামছুল হকের বাড়ি জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থান প্রতাপপুর এলাকায়। তিনি ওই গ্রামের মৃত হাসু আলীর ছেলে। আব্দুল হান্নান বগুড়া সদর উপজেলার নামুজা বড়সরলপুর গ্রামের আব্দুল জোব্বারের ছেলে।
পুলিশ সুপার জানান, ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে খোকন পার্কে সুমন, নিনজা ও রাহাত এক সাথে আড্ডা দিচ্ছিল। তখন সুমন তাদের কাছে টাকা ধার চায়। এসময় সুমন নিনজা টাকা না দিয়ে তাকে একটি কাজের প্রস্তাব দেয়। বিনিময়ে দুই লাখ টাকার আশ্বাস দেন নিনজা।
পুলিশ সুপার আরো জানান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে সুমন মাছু মেটালের সামনে যায়। সেখানে আরো দুজন সহযোগীসহ মোট পাঁচজন ছিল। নিনজার সহায়তায় তারা মাছু মেটালের ভিতরে প্রবেশ করে। এরপর প্রথমে নাইট গার্ড হান্নানকে কৌশলে পানির হাউজের দিকে নিয়ে লোহার রড দিয়ে মাথার পেছনে সজোরে আঘাত করে মৃত্য নিশ্চিত করে পানির হাউজের ভেতরে ফেলে দেয়।
এরপর অপর নাইট গার্ড শামসুলকে ঘুম থেকে ডেকে কৌশলে একই জায়গায় নিয়ে তাকেও লোহার রড দিয়ে মাথার পিছনে সজোরে আঘাত করে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক হত্যা নিশ্চিত করে একই হাউজে ফেলে দেয়। তারপর নিনজা হান্নানের ব্যবহৃত মোবাইল ও সিমকার্ড সুমনকে প্রদান করে গাজীপুর চলে যেতে বলে। সেখানে যেয়ে হান্নানের মোবাইল দিয়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবি জানাতে বলে।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে মাছু মেটালের ড্রাইভার নিনজা ওই মেটাল থেকে বিভিন্ন সময়ে মালামাল চুরি করে বাহিরে বিক্রি করে আসছিল। এই বিষয় নিয়ে নাইট গার্ডদের সঙ্গে বনিবনায় সমস্যা হওয়ায় নাইট গার্ডরা বিষয়টি মালিক পক্ষকে জানানোর কথা বলে গার্ড হান্নান ও শামসুল। চুরির বিষয়টি ধরা পড়ে যাওয়ার আশংকায় তাদেরকে হত্যা করে অপহরণের নাটক সাজায়।
পুলিশ সুপার বলেন, এ বিষয়ে বগুড়া সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতে প্রেরণ করা হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি