বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় `রোয়ানু’ উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত বহাল রাখতে বলা হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকাল ৬টার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী আবহাওয়া অধিদফতর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। বুধবার সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে বৃহস্পতিবার আবহাওয়াবিদরা এর নাম দেন রোয়ানু। সকালে সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলে আবহাওয়া বিভাগ। দুপুরে তা পরিবর্তন করে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়।
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ শুক্রবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে এক হাজার ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছকাছি এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত মানে হল, বন্দর ঘূর্ণিঝড়কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটার, তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় এখনও আসেনি।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। যাতে তারা স্বল্প সময়ের নির্দেশে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে। সেই সাথে জেলেদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার ভারি বর্ষণের এক সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছিল, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে।
অতি ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ী এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতর।
সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে বলেও আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি অব্যাহত আছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে ১১৪ মিলিমিটার।
‘রোয়ানু’ মোকাবিলায় প্রস্তুতি, ছুটি বাতিল
বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশের পূর্বাঞ্চলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও দক্ষিণাঞ্চলে মংলা উপজেলা প্রশাসন। দুর্যোগ মোকাবিলায় চট্টগ্রাম ও মংলা উভয় প্রশাসন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করেছে এবং যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম ছাড়াও উপজেলা পর্যায়ে একাধিক কন্টোল রুম খোলা রাখা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
বাগেরহাটে ১৬ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর মোকাবিলায় বাগেরহাটে ১৬টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. সফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে রাতে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে জেলায় ১৬টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
এ ছাড়া সরকারি, আধা-সরকারি সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস