পানামা খাল ফেরত চাওয়ার পর এ বার গ্রিনল্যান্ড কিনে নিতে চাইলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের হবু প্রেসিডেন্ট। যদিও গ্রিনল্যান্ড ট্রাম্পের এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছে।
উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত গ্রিনল্যান্ড বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ। গ্রিনল্যান্ডীয় ভাষায় একে ‘কালাল্লিত নুনাত’ বলা হয়, যার অর্থ ‘গ্রিনল্যান্ডে থাকা মানুষদের ভূমি’।
গ্রিনল্যান্ড উত্তর আমেরিকা মহাদেশের স্বশাসিত দ্বীপ। তবে এটি বিবেচিত হয় ইউরোপের দেশ ডেনমার্কের অংশ হিসাবে। কিন্তু কেন এই দ্বীপের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র? ট্রাম্পের দাবি, গ্রিনল্যান্ডের উপর নিয়ন্ত্রণ ‘অত্যাবশ্যক’।
নিজের সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ ট্রাম্প লিখেছেন, ‘সারা বিশ্বের নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ এই মুহূর্তে অত্যাবশ্যক।’’
ডিজিটাল লেনদেন সংস্থা পেপ্যালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা কেন হাওয়ারিকে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত হিসাবে ঘোষণা করার সময় এই বিবৃতি দেন ৭৮ বছর বয়সী রিপাবলিকান নেতা। যদিও ট্রাম্পের বিবৃতির পর গ্রিনল্যান্ড স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা বিক্রি হতে রাজি নয়।
গ্রিনল্যান্ডের প্রতি ট্রাম্পের আগ্রহ নতুন নয়। ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রথম ট্রাম্প জমানায় ওই অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন তিনি। গ্রিনল্যান্ড চুক্তি করতেও উঠেপড়ে লেগেছিলেন।
২০১৯ সালে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, গ্রিনল্যান্ডের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতার কারণে তিনি ওই অঞ্চল কিনতে চান। তার সেই ইচ্ছা শুনে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন গ্রিনল্যান্ড এবং ডেনমার্কের নেতারা। ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন বলেছিলেন, ‘‘গ্রিনল্যান্ডকে কোনও ভাবেই বিক্রি করা হবে না।’’
২০১৯ সালে গ্রিনল্যান্ড সফরে গিয়ে ফ্রেডেরিকসেন বলেছিলেন, ‘‘গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়। গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্ক নয়। গ্রিনল্যান্ড গ্রিনল্যান্ডের অন্তর্গত। আমি দৃঢ় ভাবে আশা করি যে বিষয়টি সবাই বুঝবেন।’’
গ্রিনল্যান্ড চুক্তির বিষয়ে ফ্রেডেরিকসেনের সেই মন্তব্যের পর তাঁর সঙ্গে ডেনমার্কে হতে চলা একটি বৈঠক বাতিল করেন ট্রাম্প। গ্রিনল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিম উপকূলে আমেরিকার মহাকাশ বাহিনীর ঘাঁটি পিটুফিক স্পেসবেস (আগে থুলে এয়ারবেস নামে পরিচিত ছিল) রয়েছে। আর তার জন্যও গ্রিনল্যান্ডের দখল যুক্তরাষ্ট্রের নিজেদের হাতে রাখতে চায় বলে মনে করা হয়।
সুমেরুর কাছে অবস্থিত দ্বীপটির কৌশলগত অবস্থানের কারণে রাশিয়াসহ অনেক দেশই সেটির নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার চেষ্টা করছে অনেক দিন ধরে।গ্রিনল্যান্ড উত্তর আমেরিকা মহাদেশের একটি অংশ হলেও ভূরাজনৈতিক ভাবে সেটি ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। গ্রিনল্যান্ডের বাসিন্দারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিক হিসাবে গণ্য হন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে টাকাও আসে গ্রিনল্যান্ডে।
গ্রিনল্যান্ডের দখল নিয়ে ট্রাম্পের নতুন মন্তব্যের পর গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিউট এগেডে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনিও বলেছেন, ‘‘আমরা বিক্রি হচ্ছি না এবং আমরা বিক্রি হবও না।’
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ