শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:১০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুলসহ ৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশের দাবিতে লিফলেট বিতরণ এবার কারও পক্ষ নিয়ে কাজ করলে অসুবিধা হবে : কর্মকর্তাদের সিইসি অল্প কিছুদিনের মধ্যে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান: মির্জা ফখরুল ইসলামী ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা চুরি শেখ হাসিনার দুর্নীতি খুঁজে বের করতে টাস্ক ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত ডিএমপির ১২ ডিসিকে বদলি ‘বৃহত্তর ইসরাইলের’ মানচিত্র প্রকাশ, আরব দেশগুলোর কড়া প্রতিবাদ বিমানবন্দরে রক্তাক্ত সেই প্রবাসীকে জরিমানা, হতে পারে জেলও ৩০ জুনের আগেই মহার্ঘভাতা ঘোষণা মানিকগঞ্জে ডিসির রুমের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান দাবি মানার আল্টিমেটাম দিয়ে ‌‌শাহবাগ ছাড়লেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা শরীয়তপুরে থানা থেকে ওসির মরদেহ উদ্ধার নিক্সন ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে ৩ হাজার ১৬২ কোটি টাকা লেনদেন শহীদ মিনারের পর শাহবাগ অবরোধ বিডিআর সদস্যের স্বজনদের জেনেভা ক্যাম্পের আলোচিত সন্ত্রাসী চুয়া সেলিম গ্রেপ্তার মা‌র্কি‌নিদের হয়ে ঢাকায় বিশেষ দা‌য়িত্ব সামলাবেন ট্র্যাসি জ্যাকবসন বিসিএসে বাদ পড়া ২২৭ জনের বেশিরভাগই চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন রাশিয়ায় বিমানবাহিনীর তেলের ডিপোয় ইউক্রেনের হামলা হাইভোল্টেজ ম্যাচে টস জিতে বরিশালকে ব্যাটিংয়ে পাঠালো রংপুর

গ্রাহকের আস্থার সংকট থাকলেও লিজিং কোম্পানির মুনাফায় প্রবৃদ্ধি

বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা:
  • আপলোড সময় রবিবার, ২৭ জুন, ২০২১
  • ৩১ বার পড়া হয়েছে

আমানত ও তারল্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সংকটের মধ্যে দেশের অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা লিজিং কোম্পানিগুলো। এর সঙ্গে রয়েছে গ্রাহকের চরম আস্থার সংকট। আছে করোনাকালীন সংকটও। এ পরিস্থিতিতেও চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যবসায় তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

অবশ্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফার প্রবৃদ্ধি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বেশিরভাগ অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরেই আমানত ও তারল্য নিয়ে একধরনের সমস্যার মধ্যে রয়েছে। ঠিকভাবে অর্থ ফেরত দিতে না পারায় অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের আস্থা হারিয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যে সমস্যা আরও বাড়ার কথা। এ পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হওয়া কিছুটা বিস্ময়কর।

 আমি তো বুঝি না কীভাবে বেশিরভাগ লিজিং কোম্পানির মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হতে পারে। কারণ বেশিরভাগ লিজিং কোম্পানি ঝামেলায় আছে। একটা হতে পারে যাদের ভালো ভালো ঋণগ্রহিতা আছে, তারা স্টে করছে। আবার এখন কস্ট অব ফান্ড একটু কমে গেছে। একটা হতে পারে লকডাউনের কারণে লোকজন কমানোয় অপারেশন কস্ট কম হতে পারে। এছাড়া আর কিছু তো আমি দেখি না 

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, বেশিরভাগ লিজিং কোম্পানি ঝামেলায় আছে। সুদের হার কম হওয়ায় এখন কস্ট অব ফান্ড কম। এর একটি ইতিবাচক প্রভাব মুনাফায় পড়তে পারে। এর পরও বেশিরভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হওয়ার পেছনে আর্থিক প্রতিবেদনে কারসাজি আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা উচিত। কারণ মুনাফা বেশি দেখাতে কিছু প্রতিষ্ঠান প্রতিবেদনে কারসাজির আশ্রয় নেয়।

নিয়ম অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতি তিন মাস পর পর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হয়। এরই আলোকে তালিকাভুক্ত ২৩টি লিজিং কোম্পানির মধ্যে ১০টি চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিক শেষে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যা নিয়ম অনুযায়ী স্টক এক্সচেঞ্জেও পাঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

এখনো আর্থিক অবস্থার তথ্য প্রকাশ না করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে বে-লিজিং, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি), ফারইস্ট ফাইন্যান্স, এফএএস ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, মাইডাস ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং, প্রিমিয়ার লিজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স এবং উত্তরা ফাইন্যান্স।

আর্থিক অবস্থার তথ্য প্রকাশ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারপ্রতি লোকসান করেছে ৫৯ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে তাদের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ১৩ পয়সা। এ হিসেবে কোম্পানিটির লোকসানের পাল্লা আরও ভারী হয়েছে।

এর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সম্পদেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ৫৪ পয়সা, যা ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৪ টাকা ১২ পয়সা। অর্থাৎ চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে শেয়ারপ্রতি ৫৮ পয়সা হিসেবে কোম্পানিটির সম্পদ কমেছে ১০ কোটি ৯২ হাজার টাকা।

লোকসানে পড়ার কারণ হিসেবে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন  বলেন, গত বছর রাইট অফ (ঋণ অবলোপন) প্রায় সাত কোটি টাকার মতো কালেকশন করেছিলাম। এ বছর সেখান থেকে আমরা মাত্র ৫০ লাখ টাকা কালেকশন করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটা সার্কুলার দিয়েছে, ২০২০ সালে যে খেলাপি ঋণ ছিল ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত একই রাখতে হবে। আমরা আর্থিক অবস্থা ভালো করার জন্য যেসব ক্লায়েন্ট খারাপ হয়েছে তাদের জন্য দেড় কোটি টাকা প্রভিশন রেখেছি। এ প্রভিশন রাখা এবং আগের বছরের সাত কোটি টাকা রিকোভারি করতে না পারা লোকসানের মূল কারণ।

বেলায়েত হোসেন আরও বলেন, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং কোম্পানির নিউজ আসার পর থেকে লিজিং কোম্পানিগুলোর ওপর থেকে গ্রাহকদের আস্থা কমে গেছে। ফলে আমানত পেতে সমস্যা হচ্ছে। মানুষ এখন লিজিং কোম্পানিতে অর্থ রাখতে চাচ্ছে না।

এদিকে গত বছরের তুলনায় মুনাফা কমে যাওয়ার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানটি হলো ইউনাইটেড ফাইন্যান্স। এ প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের তিন মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ১২ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৬ পয়সা। মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ক্যাশ ফ্লোতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৫৪ পয়সা। আগের বছরে একই সময়ে শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ঋণাত্মক ৩ টাকা ৭৮ পয়সা। ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক থাকার অর্থ হলো নগদ অর্থের সংকট দেখা দেয়া। যে প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ ফ্লো যতবেশি ঋণাত্মক, ওই প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থের সংকট ততো বেশি।

এদিকে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মুনাফায় সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন বাংলাদেশের (আইসিবি)। জুলাই-জুন আর্থিক বছর হিসাব করা এই প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে ৯ মাসের (২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত) তথ্য প্রকাশ করেছে।

এই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসের ব্যবসায় কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ১ টাকা ২৫ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারপ্রতি ৫৯ পয়সা লোকসান করে।

জানুয়ারি-ডিসেম্বর আর্থিক হিসাব বছর ধরা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মুনাফা সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের। প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা আগের বছরের তুলনায় বেড়ে তিনগুণ ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছরের তিন মাসে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ৪১ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৩ পয়সা।

মুনাফায় বড় প্রবৃদ্ধি হওয়ার তালিকায় রয়েছে আইডিএলসি, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং, বিডি ফাইন্যান্স। এর মধ্যে ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ২ টাকা ১ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৬৮ পয়সা।

বিডি ফাইন্যান্স চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ৫০ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩৫ পয়সা। আইডিএলসি চলতি বছরের তিন মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ১ টাকা ২৫ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৭৮ পয়সা।

এছাড়া ন্যাশনাল হাউজিংয়ের শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৭২ পয়সা, যা গত বছর ছিল ৪৮ পয়সা। ইসলামিক ফাইন্যান্সের শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৪১ পয়সা, যা গত বছর ছিল ৩৮ পয়সা। আইপিডিসির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৫৫ পয়সা, যা গত বছর ছিল ৪০ পয়সা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ  বলেন, ‘আমি তো বুঝি না কীভাবে বেশিরভাগ লিজিং কোম্পানির মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হতে পারে। কারণ বেশিরভাগ লিজিং কোম্পানি ঝামেলায় আছে। একটা হতে পারে যাদের ভালো ভালো ঋণগ্রহিতা আছে, তারা স্টে করছে। আবার এখন কস্ট অব ফান্ড একটু কমে গেছে। একটা হতে পারে লকডাউনের কারণে লোকজন কমানোয় অপারেশন কস্ট কম হতে পারে। এছাড়া আর কিছু তো আমি দেখি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘মুনাফা বেশি দেখাতে আর্থিক প্রতিবেদনে কারসাজি করতে পারে, এটা সবখানে আছে। এখানেরটা ওখানে, ওখানেরটা এখানে দেখিয়ে দিতে পারে। দেখা গেল লোন রি-শিডিউলকে রিকোভারি হিসেবে দেখিয়েছে।’

এ বিষয়ে বিডি ফাইন্যান্সের কোম্পানির সচিব মুন্সি আবু নাঈম  বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ এবং প্রভিশনের ক্ষেত্রে কিছু ছাড় দিয়েছে। এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে মুনাফায়। তাছাড়া আমরা এ বছর ভালো আমানত পেয়েছি। আমাদের আমানত বেড়েছে। সবকিছু মিলে মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে।’

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৫ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com