বাংলা৭১নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আস্থা অটুট রাখল গ্রামবাংলার মানুষ। বৃহস্পতিবার সকালে রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের গণনা শুরুর পর থেকে যে দাপট দেখাতে শুরু করে তৃণমূল শিবির, রাত পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। ফলাফল চূড়ান্ত না হলেও গণনার যে প্রবণতা সামনে আসছে, তাতে রাজ্যের ২০টি জেলা পরিষদই দখল করতে চলেছে জোড়াফুল শিবির। একইভাবে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরেও অব্যাহত সবুজ ঝড়। উল্লেখযোগ্যভাবে অধীরের গড় বলে পরিচিত মুর্শিদাবাদে ফাটল এবং মালদহের গণি মিথ চুরমার করে দিয়েছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত ভোট যুদ্ধে এই দুই জেলায় মমতার সেনাপতি ছিলেন দলের তরুণ তুর্কি শুভেন্দু অধিকারী।
তবে এই বিপুল জয়ের মধ্যেও তৃণমূল শিবিরের কাছে অস্বস্তিদায়ক হয়ে রইল জঙ্গলমহলের একটা বড় অংশ। জঙ্গলমহলের তিন জেলা পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম এবং বাঁকুড়ায় কার্যত তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। সমানে সমানে টক্কর দিয়ে জঙ্গলমহলের এই অংশে গেরুয়া শিবির নিজেদের ভিত আরও শক্ত করেছে। তৃণমূল সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে এই অংশের পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম জেলায়। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, ক্ষমতায় আসার পর থেকে যেভাবে জঙ্গলমহল তথা আদিবাসী উন্নয়নকে অভিমুখ করে এগিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেখানকার পঞ্চায়েত নির্বাচনের এবারের ফল স্থানীয় তৃণমূলের দুর্বল সংগঠন এবং নেতৃত্বকেই চিহ্নিত করছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, এই ফল নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হবে।
একইসঙ্গে সাংগঠনিক স্তরে জঙ্গলমহলে নেতৃত্ব রদবদল যে এখন সময়ের অপেক্ষা, সেই ইঙ্গিতও মিলেছে তৃণমূল সূত্রে। এবার পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ীতে আদিবাসীদের একটি সংগঠনকে সামনে রেখে দুটি পঞ্চায়েত তৃণমূলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে গেরুয়া শিবির। এই বিষয়টিকেই সামনে রেখে এদিন সন্ধ্যায় নবান্ন থেকে বেরনোর সময় দৃশ্যত বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া—ঝাড়খণ্ড সীমান্ত লাগোয়া ওখানকার কয়েকটি জায়গায় আমরা প্রার্থী দিতে পারিনি। ঝাড়খণ্ড থেকে লোক ঢোকানো হয়েছিল। সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি এবং মাওবাদীরা একযোগে লড়াই করেছিল। মমতার কথায়, তবুও সামগ্রিকভাবে কুৎসা ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ যে রায় দিয়েছে, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।
অন্যদিকে, এই নির্বাচনের অনেক আগে থেকে রক্তক্ষয় হতে থাকা বাম শিবির এবার পুরোপুরি নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একইভাবে কোমায় গিয়েছে তাদের জোটসঙ্গী কংগ্রেসও। অনেক পিছনে থাকলেও পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী বিজেপি এবার দ্বিতীয় স্থানে। পাশাপাশি আগামী লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে শাসকদল তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ যে কেবল বিজেপি’ই, তাও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলের মধ্যে দিয়ে। তবে আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় এবারের ফলাফলে স্পষ্ট হয়েছে। টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়ে ভোটে জিতে আসা প্রার্থীরা এবার পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনে বড়সড় ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবার জয়ী নির্দলদের মধ্যে সিংহভাগই তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ। সংখ্যায় যারা সিপিএমের থেকেও বেশি।
এদিকে, উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলায় কিছুটা ভালো অবস্থানে থাকা বিজেপি এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। কারণ, গেরুয়া শিবিরের তরফে ওই দুই জেলায় ভালো ফলের আশা করা হয়েছিল। তেমনটা প্রচারও ছিল। আদিবাসী অধ্যুষিত এই দুই জেলায় তৃণমূল শিবিরের প্রচারে প্রধান মুখ ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
উত্তরবঙ্গের অন্য জেলা কোচবিহার নিয়েও বন্ধ হয়েছে বিজেপি’র আস্ফালন। বাম শিবিরকে পিছনে ফেলে তারা দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলেও, ভোটের ফলাফলে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে গেরুয়া শিবিরের সমর্থকদের। এবারও অব্যাহত কোচবিহারে ঘাসফুলের বিজয় রথ।
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র:বর্তমান অনলাইন/এসএস