ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ ও লাভবান হওয়ায় গাজীপুরের কালীগঞ্জে গত বছরের তুলনায় এ বছর তিলের আবাদ বেড়েছে। উচ্চ ফলনশীল জাতের তিলের আবাদের দিকে ঝুঁকছেন কৃষক। অথচ এক সময় এই এলাকায় তিলের আবাদ কমতে কমতে প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে গিয়েছিল।
দেশে তিলের উচ্চ ফলনশীল নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন ও সেইসঙ্গে কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে তিল চাষের প্রতি কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের ফলে তিল চাষের ব্যাপারে আবারও কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে। তারই ফলশ্রুতিতে এ বছর তিলের আবাদ আগের চেয়েও বেড়েছে।
তিল সাধারণত ভোজ্য তেল হিসেবে চাষ করা হয়। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিলের ব্যবহার বেড়েছে। খাদ্য হিসেবে তিল খুবই জনপ্রিয়। বিশেষ বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান এবং বেকারি শিল্পে তিলের ব্যবহার রয়েছে। নাড়ু, মোয়া, বিস্কুট, রুটি ইত্যাদি জাতীয় খাবার তৈরিতে তিলের ব্যবহার করা হয়। এছাড়া চাইনিজ রেস্টুরেন্টগুলোতে ফার্স্টফুড খাবার তৈরিতে তিলের ব্যবহার বেড়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, কালীগঞ্জে এক সময় তিলের ভালো চাষ হলেও বিগত বেশ কয়েক বছর এ উপজেলায় তিলের আবাদ হয়নি বললেই চলে। গেল বছর স্থানীয় কৃষি অফিসের বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে উদ্বুদ্ধকরণের জন্য কিছু বিনা তিল-৪ বীজ সংগ্রহ করে।
পরে সেই বীজগুলো উপজেলার কয়েকজন কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়। ওই বীজ দিয়ে কৃষকেরা প্রায় ৩ বিঘা জমিতে তিলের চাষ করেছে। সেখানে বিঘা প্রতি দেড় টন তিলের আবাদ পেয়েছে। এ ফলন দেখে উপজেলার অন্য কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।
এ বছর কালীগঞ্জে প্রায় এক হেক্টর জমিতে তিলের চাষ হয়েছে। অনুকূল পরিবেশ ও ক্ষেতের অবস্থা দেখে স্থানীয় কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরতরা ভাল ফলনের আশা করছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, তিল সাধরণত রবি এবং খরিপ-১ দুই মৌসুমেই চাষ করা হয়ে থাকে। এ বছর কালীগঞ্জে এক মৌসুমে খরিপ-১ জাতের তিল চাষ করা হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা বিনার সহযোগীতায় বিনা তিল-৪ চাষ করেছে। মাঠে এখনও ফসল দণ্ডায়মান অবস্থায় আছে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে তা হারবেষ্ট করা হবে। তিল সাধারণত ৮৭ থেকে ৯২ দিন অর্থাৎ ৩ মাসের মধ্যে ফসল ঘরে তোলা যায়।
এ উপজেলায় নতুন করে তিল চাষ বাড়ার কারণ জানতে কথা হয় স্থানীয় কয়েকজন তিল চাষির সাথে। তারা জানান, এক সময় দেশি জাতের তিলের চাষ করে অন্যান্য ফসলের তুলনায় তেমন একটা লাভ হতো না। তাই এলাকার মানুষ তিলের আবাদ প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল। বর্তমানে দেশে উচ্চ ফলনশীল তিলের জাত উদ্ভাবন হওয়ায় ও কৃষি বিভাগের তদারকিতে আবারও মানুষ তিল চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের চুপাইর গ্রামের কামাল হোসেন বলেন, গত বছর কৃষি অফিস থেকে আমাকে এক কেজি তিল বীজ দিয়েছিল। সেই বীজের কিছুটা দিয়ে আমি চাষ করেছি এবং কিছু বীজ অন্য একজনকে দিয়েছি। আমার এবং ওই কৃষকের চাষ করা তিলের ফলন ভালো হয়েছে। এ বছরও কৃষি অফিস থেকে আমাকে বীজ দেওয়া হয়েছে। আমি তিন বিঘা জমিতে এবার তিলের চাষ করেছি। এবারও ফলন ভালো হবে বলে আমি আশা করছি।
ওই গ্রামের কৃষক আকমল খান বলেন, আমার প্রতিবেশি ভাই কামাল তিলের চাষ করেছে। তার ফলন দেখে আমি আগামীতে তিল চাষে আগ্রহী। কৃষি অফিস সহযোগীতা করলে আমি এ তিল চাষ করতে চাই। একই এলাকার আরেক কৃষক লিটন মিয়াও একই কথা বলেন।
উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান বলেন, গত বছর কিছু পরিমাণ তিল বীজ সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেটা আবাদ করে কৃষকরা ভাল ফল পেয়েছিলেন। এ বছরও প্রণোদনার আওতায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে তিল বীজ বিতরণ করা হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ