টাঙ্গাইলের সখীপুরে খাদ্য সংকটে পড়ে লোকালয়ে এসেছে বানরের দল। খাদ্য সংকটের কারণে বিলুপ্ত সব বন্যপ্রাণীদের মধ্যে সখীপুরের বনাঞ্চলের দেওবাড়ী এলাকায় টিকে আছে একমাত্র বন্যপ্রাণী বানর। যার সংখ্যা আড়াই শতাধিক। প্রতিনিয়ত তাদের দিন কাটে অর্ধাহারে-অনাহারে।
স্থানীয়রা জানান, খাদ্যের অভাবে দুই-তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে তারা হানা দেয় স্থানীয় কৃষকের আম, কাঁঠাল ও সবজির বাগানসহ শস্য খেতে। বাড়িতে ঢুকে খেয়ে ফেলে কৃষকের রান্না করা খাবার। ক্ষুধার যন্ত্রণায় তারা মাঝেমধ্যে দল বেঁধে ছুটে আসে জনাকীর্ণে দর্শনার্থী ও উৎসুক জনতার সামান্য কলা, বিস্কুট কিংবা পাউরুটি খেতে। এমনই জীবনযুদ্ধে বেঁচে আছে বন্যপ্রাণী বানরগুলো।
দেওবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা আল-আমিন জানান, শালগজারি উজাড় হওয়ায় সামান্য সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবস্থান নিচ্ছে বানরগুলো। ইউক্যালিপ্টাস ও আকাশমনি বাগানে লতাপাতা ও ফলদবৃক্ষ না থাকায় বানরগুলো খাদ্য অভাবে কোনো রকমে বেঁচে আছে। শুকিয়ে গেছে তাদের শরীর। সরকারি সহায়তা না পেলে অন্য প্রাণীর মতো শিগগিরই হারিয়ে যাবে বন্যপ্রাণী বানরও।
এক সময় সখীপুরের শালগজারির বনাঞ্চলে বসবাসরত বানর ও বিলুপ্ত হওয়া নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী হরিতকী, আমড়া, বহেড়া, আমলকি, বংকৈ, তিথিজাম, পিড়ালু, মেঠোআলু, কুল, অড়বরই, চিচিঙ্গা, মাক্কাল ফল, আনাই, গাধুলা ও শটিসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। তারা আনন্দে ছুটে বেড়াত এক গাছ থেকে অন্য গাছে। শাল-গজারির বন উজাড় হওয়ায় এসব ফলের গাছপালা ও খাদ্য জাতীয় উদ্ভিদও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাই বানরগুলো খাদ্যের অভাবে চলে এসেছে মানুষের খুব কাছাকাছি। তাদের অভয়াশ্রমও নেই। সরকারি তহবিল থেকেও খাদ্যের কোনো ব্যবস্থা নেই।
বহেড়াতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা এইচএম এরশাদ জানান, বানরের জন্য স্থায়ী কোনো বরাদ্দ নেই। গত এক বছরে দুই কিস্তিতে ১০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। যা বানরের খাবারের জন্য ব্যয় করেছি।
সরকারি মুজিব কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুনির্মল চন্দ্র বসু জানান, বনে বসবাসরত এসব বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হলে পরিবেশের ভারসাম্য হারাবে। আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন, বিভিন্ন ধরনের রোগ-বালাই সৃষ্টি, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও ইকোসিস্টেম সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ইউএনও চিত্রা শিকারী বলেন, এ বিষয়ে সরকারের স্থায়ী কোনো বরাদ্দ নেই। চলমান অর্থ বছরে উপজেলা পরিষদ-প্রশাসনের মাধ্যমে সামান্য সাময়িক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। বন্যপ্রাণী রক্ষায় জেলা পরিষদের সভায় প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক জানান, আগামী অর্থ বছর থেকে চাহিদা অনুযায়ী বানরগুলোর জন্য খাবারের ব্যবস্থা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএফ