বাংলা৭১নিউজ,(পিরোজপুর)প্রতিনিধি: দুদকের তিন মামলায় পিরোজপুরের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএমএ আউয়াল ও তার স্ত্রী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী অধ্যাপিকা লায়লা পারভীনের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
পরে আদালত আসামিদের স্বাস্থ্যজনিত কারণে মেডিকেল রিপোর্টের ভিত্তিতে এবং জেল কোড অনুযায়ী তাদেরকে জেলা হাসপাতালে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
এর সাড়ে ৪ ঘণ্টা পর আদালতের দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ ও ভারপ্রাপ্ত স্পেশাল জজ নাহিদ নাসরিন আওয়াল দম্পতির জামিন মঞ্জুর করেন।
পিরোজপুর আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ দেলোয়ার হোসেন নিশ্চিত করে জানান, সাবেক এমপি ও তার স্ত্রীকে জেলা হাসপাতালে নেয়া হলে আদালতের দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ ও ভারপ্রাপ্ত স্পেশাল জজ নাহিদ নাসরিন ২০ হাজার টাকার বন্ডের মাধ্যমে মানবিক ও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আগামী ২ মাসের জন্য তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
মঙ্গলবার সকাল ১১টা ১০ মিনিটে জেলা ও দায়রা জজ মো. আ. মান্নান তার আদালতে এ মামলার বিচার কাজ শুরু করেন। ১২ জন আইনজীবীর শুনানি শেষে ১১টা ৫৫ মিনিটে জামিন নামঞ্জুর করেন আদালত।
রায়ের পরপরই আদালতে জেলা বারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, অসৎ চরিত্রের অধিকারী দুর্নীতিবাজ ও বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িতে জেলা জজ আ. মান্নানের অনতিবিলম্বে অপসারণ চাই এবং এই মুহূর্ত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বারের সব আইনজীবীরা আদালত বর্জন ঘোষণা করলাম।
সোমবার আওয়াল দম্পতির আদালতে হাজির হওয়ার কথা থাকলেও শেষ দিন মঙ্গলবার তারা আদালতে হাজির হন।
আদালতে আইনজীবীদের শুনানির এক পর্যায় একেএমএ আউয়াল এজলাসে দাড়িয়ে বিচারককে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা করা হয়েছে।
এ সময় আসামিদের পক্ষে জেলা বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট এসএম বেলায়েত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক এবং জিপি মো. শহীদুল হক পান্না, সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট শাহ আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বারের সাবেক সভাপতি এমএ হাকিম হাওলাদার, বারের সাবেক সভাপতি কানাই লাল বিশ্বাস, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ দেলোয়ার হোসেন, বারের সাবেক সম্পাদক আহসানুল কবির বাদলসহ অন্তত ২৫ জন আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন।
অপরদিকে দুদকের আইনজীবী হিসেবে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট মুনসুর উদ্দিন হাওলাদার।
এদিকে সোমবার থেকেই থেকেই পুরো আদালত এলাকা জুড়ে ছিল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বেষ্টনি। মঙ্গলবার সকাল থেকে সে বেষ্টনী আরও মজবুত করে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যা ব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা হুলারহাট প্রধান সড়ক থেকে আদালত অঙ্গন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার গজের মধ্যে জনসাধারণের চলাচলের ওপর বিশেষ নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের সময় বিচারক রায় ঘোষণা করলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে বিষাদের ছায়া নেমে আসে এবং আদালতের মধ্যেই শ্লোগান দিয়ে, ‘আউয়াল তোমার ভয় নেই আমরা আছি লাখো ভাই; ‘জেলের তালা ভাঙ্গবো আউয়ালকে মুক্ত করে আনবো’ ইত্যাদি শ্লোগান দিতে থাকে।
এ সময় আদালতের পুলিশ সদস্যরা বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের আদালত অঙ্গন থেকে বের করে দেয়। তারা আদালতের বাহিরে এসেও আবার বিক্ষোভ শুরু করেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সরকার দলীয় লোকজন শহরের বঙ্গবন্ধু চত্বর থেকে জেলা হাসপাতাল পর্যন্ত বিভিন্ন সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখলে যানবাহন কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
পরে পুলিশ সদস্যরা সেগুলো অপসারণ করে যান চলাচলের সুযোগ করে দেয়। বেলা ১টার দিকে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা শহরের প্রধান সড়কগুলোতে প্রতিবাদ মিছিল করতে থাকে এবং ছাত্রলীগের একাংশের একটি অফিস ঘরে ভাংচুর চালিয়ে পোস্টার ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে। এসময় শহরের দোকানপাট সব বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগ জরুর সভা আহবান করেছে দলের সাধারণ সম্পাদক এমএ হাকিম হাওলাদার।
পিরোজপুর সদর থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম বাদল বলেন, সাবেক এমপি একেএমএ আউয়াল আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করবেন, এমন খবর পেয়েই আদালত এলাকায় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা, জালিয়াতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে পিরোজপুর ১ (নাজিরপুর-পিরোজপুর সদর-স্বরূপকাঠি) আসনের সাবেক এমপি একেএমএ আউয়াল এবং তার স্ত্রী পিরোজপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর পৃথকভাবে তিনটি মামলা দায়ের করে দুদক।
মামলাগুলোর মধ্যে একটিতে আসামি করা হয় এমপির স্ত্রী লায়লা পারভীনকে। তিনটি মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছিলেন আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীন। গত ৭ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ তাদেরকে ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। সে অনুযায়ী আউয়াল দম্পতির জামিন মেয়াদ শেষ হয় মঙ্গলবার।
বাংলা৭১নিউজ/এমআর