শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:২৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুলসহ ৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশের দাবিতে লিফলেট বিতরণ এবার কারও পক্ষ নিয়ে কাজ করলে অসুবিধা হবে : কর্মকর্তাদের সিইসি অল্প কিছুদিনের মধ্যে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান: মির্জা ফখরুল ইসলামী ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা চুরি শেখ হাসিনার দুর্নীতি খুঁজে বের করতে টাস্ক ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত ডিএমপির ১২ ডিসিকে বদলি ‘বৃহত্তর ইসরাইলের’ মানচিত্র প্রকাশ, আরব দেশগুলোর কড়া প্রতিবাদ বিমানবন্দরে রক্তাক্ত সেই প্রবাসীকে জরিমানা, হতে পারে জেলও ৩০ জুনের আগেই মহার্ঘভাতা ঘোষণা মানিকগঞ্জে ডিসির রুমের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান দাবি মানার আল্টিমেটাম দিয়ে ‌‌শাহবাগ ছাড়লেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা শরীয়তপুরে থানা থেকে ওসির মরদেহ উদ্ধার নিক্সন ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে ৩ হাজার ১৬২ কোটি টাকা লেনদেন শহীদ মিনারের পর শাহবাগ অবরোধ বিডিআর সদস্যের স্বজনদের জেনেভা ক্যাম্পের আলোচিত সন্ত্রাসী চুয়া সেলিম গ্রেপ্তার মা‌র্কি‌নিদের হয়ে ঢাকায় বিশেষ দা‌য়িত্ব সামলাবেন ট্র্যাসি জ্যাকবসন বিসিএসে বাদ পড়া ২২৭ জনের বেশিরভাগই চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন রাশিয়ায় বিমানবাহিনীর তেলের ডিপোয় ইউক্রেনের হামলা হাইভোল্টেজ ম্যাচে টস জিতে বরিশালকে ব্যাটিংয়ে পাঠালো রংপুর

করোনা সংক্রমণের সন্দেহভাজনদের খোঁজার কাজটি দুর্বল হয়ে পড়েছে

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০
  • ৭৭ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: করোনা সংক্রমণের সন্দেহভাজন মানুষ খুঁজে বের করার কাজটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। করোনা আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি চিহ্নিত করা এবং তাঁদের নজরদারির বিষয়টি নিশ্চিত না হলে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও কিছু জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাজটি ঠিকমতো হচ্ছে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড- ১৯ আক্রান্ত বা সন্দেহ-ভাজন রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার কাজটিকে বলছে ‘কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং’। অর্থাৎ আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে অনুসরণ করতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে, তার ওপর নজরদারি করতে হবে। উপসর্গ দেখা দিলে তাকে পরীক্ষার আওতায় নিতে হবে। রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসা দিতে হবে।

কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের কাজটি শুরু থেকে করে আসছিল সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। গত মার্চে মাদারীপুর জেলার শিবচর এলাকায় ৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল। আইইডিসিআরের তিনজন স্বাস্থ্যকর্মী ২০ ও ২১ মার্চ ওই ৯ জনের মধ্যে ছয়জনের কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করেছিলেন। তাঁদের সংস্পর্শে আসা ৩৫০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ১০৭ জনকে কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) রাখা হয়। বাকি ২৪৩ জনের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকা লকডাউন (অবরুদ্ধ) করা হয়। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন এ কাজে স্বাস্থ্য বিভাগকে সহায়তা করেছিল। বর্তমানে শিবচরে ২১ জন রোগী আছে।

দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুতে কাজটি যেভাবে হয়েছিল, এখন তা হচ্ছে না। এ কাজ করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণেরও দরকার আছে। সেই প্রশিক্ষিত জনবলেও ঘাটতি আছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বলেন, ঢাকায় কমিউনিটি সংক্রমণ হয়ে গেছে। এখানে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং সম্ভব নয়। কাজটি বন্ধ আছে। তবে উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে কাজটি চলমান আছে।

কাদের, কীভাবে খুঁজতে হবে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুসরণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ‘কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং’–এর নির্দেশনা তৈরি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, সন্দেহভাজন বা নিশ্চিত কোভিড–১৯ রোগী এক মিটারের মধ্যে ১৫ মিনিট বা তার বেশি সময় অবস্থান করলে, সন্দেহভাজন বা নিশ্চিত কোভিড–১৯ রোগীর সংস্পর্শে এলে, ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী পরা ছাড়া কোভিড-১৯ রোগীকে সেবা দিলে তাঁদের খুঁজে বের করতে হবে। তাতে আরও বলা হয়েছে, করোনার লক্ষণ দেখা দেওয়ার ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে সংস্পর্শে আসা মানুষগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে।

করোনা উপসর্গ নিয়ে যাঁরা মারা গেছেন, অথচ তাঁদের শনাক্তকরণ পরীক্ষা হয়নি বা পরীক্ষার ফলাফল ঝুলে আছে—তাঁদের সংস্পর্শে আসা মানুষদেরও খুঁজতে হবে। বলা হয়েছে সংস্পর্শে আসা প্রত্যেক ব্যক্তির নাম, ঠিকানা, আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক, সর্বশেষ কবে সংস্পর্শে এসেছিলেন- এসব তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মী ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থেকে বা ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগের কাজটি করবেন। কোনো লক্ষণ দেখা দিলে সে অনুযায়ী হাসপাতালে বা বাড়িতে থেকে চিকিৎসার পরামর্শ দেবেন।

শুরুটা ভালো ছিল

আইইডিসিআর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও জনস্বাস্থ্যবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর চারটি জায়গায় আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার কাজটি ভালোই হয়েছিল। এসব এলাকা হচ্ছে রাজধানীর টোলারবাগ ও বাসাবো, গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর, মাদারীপুরের শিবচর এবং নারায়ণগঞ্জ।

৮ মার্চ দেশে প্রথম শনাক্ত হওয়া রোগীর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের প্রবাসী বাংলাদেশি ছিলেন। ওই সময়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করার সময় আইইডিসিআরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজনের সংস্পর্শে প্রায় ১০০ জন এসেছিলেন, এমন তথ্য আমরা পেয়েছি।’ সংস্পর্শে আসা মানুষ খুঁজতে নরসিংদী ও গাজীপুর পর্যন্ত তাঁরা গেছেন।

ভাইরাসটির সংক্রমণক্ষমতা অনেক বেশি। একজন থেকে বহুজনে ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রমণ কমাতে সন্দেহভাজন ব্যক্তি খুঁজে বের করা দরকার।

সূত্র বলছে, আইইডিসিআরের প্রায় ৪০ জনের একটি প্রশিক্ষিত চিকিৎসক দল এই কাজ করতেন। তাঁরা প্রত্যেকেই ফিল্ড এপিডেমিওলজি ট্রেনিং কর্মসূচির ফেলো। প্রত্যেকেই স্বাস্থ্য বিসিএস কর্মকর্তা। নিপাহ বা অ্যানথ্রাক্সের মতো রোগের প্রাদুর্ভাবের সময় তাঁরাই মাঠের তথ্য সংগ্রহ করেন।

তবে তাঁরা এখন কাজটি করছেন না বলে জানা গেছে। কেন করছেন না, তা টেলিফোনে জানতে একাধিকবার চেষ্টা করে আইইডিসিআরের পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

কাজটি করা দরকার

নতুন এই ভাইরাসের সংক্রমণক্ষমতা অনেক বেশি। একজন থেকে বহুজনে ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রমণ কমাতে সন্দেহভাজন ব্যক্তি খুঁজে বের করা দরকার। খুঁজে বের করে তাঁদের সতর্ক না করলে বা তাঁদের হোম কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) না রাখলে, তাঁরা যেকোনো সময় সংক্রমণের উৎস হতে পারেন।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন বলেন, আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা মানুষ চিনতে পারলে সংক্রমণ বাধাগ্রস্ত করা সহজ হয়। তবে সারা দেশে তা করা সম্ভব না হলেও, যেসব জেলায় সংক্রমণ কম, সেখানে করা দরকার। তাহলে ওই জেলায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।

বাস্তব পরিস্থিতি

আইইডিসিআর রাজধানীর মিরপুরের সন্দেহভাজন এক ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে ১৭ এপ্রিল। ১৯ এপ্রিল আইইডিসিআর জানায়, ওই ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত। ২০ এপ্রিল ওই ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হন। আইইডিসিআর এই ব্যক্তির পরিবারের চার সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করে। কিন্তু ওই ব্যক্তি ১৭ এপ্রিলের আগের ১৪ দিন কাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তা খোঁজ করেনি আইইডিসিআর।

রাজধানীর ১৪টি ল্যাবরেটরিতে এখন নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। দেশে প্রতিদিন যত মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে, তার প্রায় অর্ধেক রাজধানীর। এসব সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে বহু মানুষ আসছেন। তাঁদের খুঁজে বের না করলে সংক্রমণের পথ বন্ধ করা সহজ হবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলায় চারজন সংক্রমিত বলে শনাক্তকরণ পরীক্ষায় জানা গেছে। সংক্রমণের বিস্তার রোধে এই জেলায় কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চাইলে জেলার সিভিল সার্জন বলেছেন, আক্রান্ত চারজনের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, সবকিছু করা সম্ভব নয়। যতটুকু সম্ভব, ততটুকু তাঁরা করছেন।

দক্ষিণের একটি জেলার সিভিল সার্জন বলেছেন, ঢাকা থেকে একটি গাড়িতে করে রোগীসহ চারজন এসেছিলেন। কিন্তু গাড়িতে থাকা সবার তথ্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, ফেনী, ভোলা, পিরোজপুর, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, বাগেরহাট, মাগুরা, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় রোগীর সংখ্যা ১০ জনের কম। অন্যদিকে ঢাকা শহরের ৪১টি এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ বা ২ জন। জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলেছেন, এসব জেলায় ও ঢাকা শহরের এসব এলাকায় ‘কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং’ অব্যাহত রাখা দরকার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চল) সাবেক উপদেষ্টা মুজাহেরুল হক বলেন, ১০ জনের কম রোগী আছে- এমন জেলাগুলোকে রক্ষা করার কৌশল সরকারকে এখনই নিতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়িতে অথবা সরকারনির্ধারিত হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখতে হবে। তাঁদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের এখনই খুঁজে বের করতে হবে। এই কাজে বিলম্ব হলে অথবা কাজটি ঠিকমতো না হলে এসব জেলাতেও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

বাংলা৭১নিউজ/তথ্যসূত্র: প্রথম আলো

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৫ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com