জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর প্রভাব মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে আজারবাইজানের বাকুতে বসছে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলন। সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সম্মেলনে অংশ নিতে তিনি আগামী ১১-১৪ নভেম্বর আজারবাইজানে সরকারি সফর করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। নাম না প্রকাশ শর্তে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী ১১ থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত আজারবাইজানের বাকুতে বসছে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলন। সম্মেলনে অংশ নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি আগামী ১১ থেকে ১৪ নভেম্বর আজারবাইজানে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সরকার গঠনের পর ড. ইউনূস প্রথম বিদেশ সফর করেন যুক্তরাষ্ট্রে। গত সেপ্টেম্বরে প্রধান উপদেষ্টা নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেন। নিউইয়র্কের পর দ্বিতীয় বিদেশ সফরে কপ-২৯ সম্মেলনে যোগ দিতে আজারবাইজান যাবেন প্রধান উপদেষ্টা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টার কপ-২৯ সম্মেলনে অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি চলছে। জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ বাকুতে নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরবে। তবে কোন বিষয়গুলো এজেন্ডায় রাখা হবে, তা এখনই প্রকাশ করতে চান না তারা।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আবার বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ অবশ্যই নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে কথা বলবে। যেহেতু প্রধান উপদেষ্টা যাবেন, সেক্ষেত্রে সম্মেলনে বাংলাদেশের গুরুত্ব থাকবে, তেমনি বাংলাদেশের এজেন্ডায় ভালো উপাদান থাকবে।
ধারণা করা হচ্ছে, বাকুতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, সেটি তুলে ধরা হবে সম্মেলনে। এক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের পূর্বাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলায় বন্যার কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা তুলে ধরবে বাংলাদেশ।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি তহবিল ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড’, প্যারিস চুক্তির তহবিল এবং জলবায়ু উদ্বাস্তুদের কথা তুলে ধরার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া উন্নত দেশগুলো থেকে সবুজ প্রযুক্তিতে সহায়তা চাইতে পারে বাংলাদেশ।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, প্রধান উপদেষ্টা জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি বাকুতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠক এবং সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
সবশেষ, ২০২৩ সালে কপ-২৮ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ২০২২ সালে কপ-২৭ মিশরের শার্ম এল-শেখে অনুষ্ঠিত হয়। ওই দুই সম্মেলনে বাংলাদেশের সাবেক সরকারপ্রধান অংশগ্রহণ করেননি। তবে ২০২১ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে কপ-২৬ সম্মেলন অংশ নিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে কপ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি।
প্রসঙ্গত, কনফারেন্স অব দ্য পার্টিসের সংক্ষিপ্ত রূপ কপ। এটি বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিপর্যয় মোকাবিলায় জাতিসংঘের একটি উদ্যোগ। ১৯৯৫ সালে কপের প্রথম সম্মেলন হয়। ১৯৯৯ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিতে কপের জলবায়ু সম্মেলনে ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ ইস্যুটি প্রথমবারের মতো সামনে আসে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএকে