কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৫তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৮ সালের এই দিনে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের দৌলতপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের ডাক নাম ছিল কাজল। বাবার রাখা প্রথম নাম শামসুর রহমান হলেও পরে তার বাবা ছেলের নাম বদলে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। একাধারে লেখক, নাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, কবি ও গীতিকার হুমায়ূন শিল্পসৃষ্টি ও মনোরঞ্জনের মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন অবলীলায়।
বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্য লেখক।
রসবোধ আর অলৌকিকতার মিশেলে বাংলা কথাসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। তার সৃষ্টি হিমু, মিছির আলী, বাকের ভাই চরিত্রগুলো পেয়েছে দারুণ জনপ্রিয়তা। তার লেখা গানগুলো এখনও মানুষের মুখে মুখে।
১৯৭২ সালে প্রকাশিত হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ পাঠকমহলে এতটাই নন্দিত হয়েছিল যে এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ১৯৮০-১৯৯০ এর দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য ধারাবাহিক এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র রচনা শুরু করেন তিনি। ১৯৮৩ সালে তার প্রথম টিভি কাহিনীচিত্র ‘প্রথম প্রহর’ বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার শুরু হলে বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
নব্বই দশকের মাঝামাঝি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে লেখালেখিতে পুরো মনোযোগ দেন হুমায়ূন আহমেদ। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই ক্যান্সারের কাছে হার মানার আগে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, গীতিকার, নাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক- প্রতিটি ক্ষেত্রেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন।
হুমায়ূন আহমেদ ‘নন্দিত নরকে’ এবং ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘বাদশা নামদার’সহ দুই শতাধিক উপন্যাস লিখেছেন। তার রচিত ‘হিমু’, ‘শুভ্র’, ‘মিসির আলি’র মতো অনবদ্য চরিত্র। আশির দশক থেকে শুরু করে তার নির্মিত ‘বহুব্রীহি’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কোথাও কেউ নেই’-এর মতো নাটকগুলো বর্তমান প্রজন্মের কাছেও এখনো একইভাবে জনপ্রিয়।
হুমায়ূন আহমেদের চিত্রনাট্য ও পরিচালনার ছবিগুলোর মধ্যে ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ দর্শক ও সমালোচকদের মন জয় করেছে। ‘খেলা’, ‘অচিন বৃক্ষ’, ‘খাদক’, ‘একি কাণ্ড’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘অন্যভূবন’ এর মত নাটকগুলোর আলোচিত ডায়ালগ এখনও অনেকের মুখেই শোনা যায়।
বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন তিনি। এছাড়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কারসহ (১৯৮৮) অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন নন্দিত এই কথাসাহিত্যিক। জাপান টেলিভিশন ‘এনএইচকে’ হুমায়ূন আহমদকে নিয়ে নির্মাণ করে ১৫ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘হু ইজ হু ইন এশিয়া’।
মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৬৪ বছর বয়সে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই মারা যান হুমায়ূন আহমেদ। যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা চলছিল তার। সেখান থেকে মরদেহ ঢাকায় আনার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে লাখো মানুষের অশ্রুপুষ্পতে সিক্ত হন তিনি। ২৪ জুলাই নুহাশপল্লীতে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় তাকে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ