বাংলা৭১নিউজ, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের ফুলপুরে কংশ নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে বাড়িঘর, বাড়ছে সহায় সম্বল হারানো মানুষের কান্না। কংশ নদীর ভাঙন পরিস্থিতির কথা বলছিলেন উপজেলার ঠাকুর বাখাই গ্রামের গৃহবধু সুফিয়া খাতুন। তিনি বলেন, ‘দুই বছরের মধ্যে তিনবার ঘর সরাইছি। অহন হিরাবার নদীর মধ্যে পইড়া যাইতাছে। রাইত অইলে হুত্তারিনা। হজাগ তাহন লাগে। কোন সময় ঘর ভাইস্যা যায়। আমরা কোন টেহা পইসা চাই না। নদীডাত বাঁধ দিয়া ভাঙনডা ফিরাইয়া দেইন। সরকারের কাছে এইডাই আমরার দাবি’।
এলাকাবাসী জানায়, কংশ নদীর বুক জুড়ে বেশ বড় চর পড়েছে। এতে নদীটির গতিপথ সরে গিয়ে ঠাকুর বাখাই গ্রামে প্রবেশ করেছে। সেখানে গত কয়েক বছর ধরে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বেড়ে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারন করেছে।
এতে গত কয়েকদিনে এ গ্রামের সরচাপুর বাজার সংলগ্ন এলাকায় অর্ধশত পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। এছাড়া আরও ৩০টি পরিবার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
গ্রামবাসী জানায়, নদী ভাঙনে অসংখ্য মানুষ জমিহারা হয়েছেন। গ্রামে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমির শহীদ মিনারটিও যেকোন সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
এদিকে ফুলপুর-হালুয়াঘাট সীমান্তবর্তী এলাতা থেকে কংশ নদী সরে গিয়ে ভাঙন সৃষ্টি করে ফুলপুর ইউনিয়নের বাশতলা গ্রামের প্রায় এক কিলোমিটার ভিতরে প্রবেশ করেছে। এতে ঐতিহ্যবাহী ডেফুলিয়া বাজার বিলীন হয়ে গেছে।
কংশ ও খড়িয়া নদীর সংযোগ স্থলের বাঁশতলা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে রয়েছে। সেখান থেকে শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে অন্য জায়গায় সরে গেছে। আরও শতাধিক পরিবার ঘর হারানোর হুমকিতে রয়েছেন।
স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান খোকা বলেন, কোনো প্রয়োজন ছাড়াই পানি উন্নয়ন বোর্ড পার্শ্ববর্তী খড়িয়া নদীর তলায় স্লুইসগেট করে প্রায় দেড় কোটি টাকা জলে ফেলেছে। অথচ বারবার দাবি জানালেও কংশ নদীর ভাঙন রোধে কিছু করছে না।
জানা গেছে, নদী ভাঙন থেকে বাড়ি-ঘর রক্ষার দাবি নিয়ে মঙ্গলবার বাখাই গ্রামের ৪০/৫০ জন নারী পুরুষ ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন। তিনি তাদের কথা শুনে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাবনা পাঠাবেন বলে আশ^স্ত করেন।
ফুলপুর ইউপির চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, বাঁধ নির্মাণ ও খনন করে নদীর গতিপথ পরিবর্তন না করলে সমস্যার সমাধান হবে না।
সমস্যা সমাধানে স্থানীয় সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদ ও সংসদ সদস্য জুয়েল আরেংয়ের ডিউ লেটার নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেছেন, জরুরি ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস