প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রেমিটেন্স সহজে বৈধপথে প্রিয়জনের কাছে সরাসরি পৌঁছে দিতে এমএফএস-এর সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে বিকাশ। এখন বিশ্বের ৯০টি দেশে থেকে ৮০টিরও বেশি মানি ট্রান্সফার সংস্থার মাধ্যমে দেশের ১৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক হয়ে কোটি প্রবাসী প্রিয়জনের বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাচ্ছেন। এ সুবিধার কারণেই ২০২২ সালে প্রবাসীরা স্বজনদের বিকাশ অ্যাকাউন্টে ৪০৭ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাদাত তার মায়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারেন। কিন্তু তার মা কোথাও না গিয়ে যখন যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু টাকা তুলতে পারেন বিকাশের মাধ্যমে। এ সুবিধার কারণেই বিকাশে রেমিটেন্স পাঠান তিনি।
এ প্রসঙ্গে সাদাতের মা রাজধানীর বনানীর বাসিন্দা শাহনাজ হাবিব বলেন, ‘হুট করে আমার বিকাশে একটা বড় অঙ্কের টাকা আসে। আমি ভেবেছি আমার ছেলে হয়তো কোথাও খরচ করা বাবদ এই টাকা পাঠিয়েছে। কিছুক্ষণ পর ফোন করে ছেলে আমাকে জানায় এই টাকা শুধু সে আমার জন্য পাঠিয়েছে। আমার যা মন চায় তাই যেন করি। কাউকে দান কিংবা কোনো কিছু কেনার জন্য নয়। একদম আমার জন্য টাকা! এতগুলো টাকা আমি কি করবো? এটা যে কী আনন্দের বলে বোঝানো যাবে না!’
‘এই আনন্দ আর আমার ছেলের ভালোবাসা আমার কাছে পৌঁছেছে বিকাশের মাধ্যমে। বিকাশ আমার জীবন সহজ করে দিয়েছে।’ বলেন শাহনাজ হাবিব।
বিকাশের রেমিটেন্সের মাধ্যমে ঘরে বসেই এখন দূর-দূরান্তের টাকা পাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। এতে পরিবারের সদস্যদের ব্যাংকে যাওয়া, ব্যাংকে গিয়ে অপেক্ষা করে টাকা তোলার ঝামেলা পোহানোর দিন শেষ হয়েছে। বাবা-মাকে প্রবাস থেকে টাকা পাঠিয়ে সন্তান নিশ্চিন্ত হতে পারেন যে, টাকা তুলতে বাবা-মাকে ঘর থেকে বের হয়ে খুব দূরে যেতে হবে না। কাছের কোনো দোকান থেকেই তারা টাকাটা তুলতে পারবেন।
তেমনই একজন মা ফারহানা আক্তার ডলি। তার তিন ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে কানাডা থাকেন। মা ফারহানা আক্তার দেশে একটি স্কুল পরিচালনা করেন। স্কুলের জন্য ছেলে বিদেশ থেকে নিয়মিত টাকা পাঠান বিকাশের মাধ্যমে।
ফারহানা আক্তার ডলি বলেন, ‘দেশের বাইরে থেকে ছেলে-মেয়েরা টাকা পাঠায় স্কুলের খরচ কিংবা গ্রামের বাড়িতে নানান স্থাপনা তৈরি করার জন্য। বিকাশ এই রেমিটেন্স সেবা চালু করার পর মনে হলো জীবনের অনেক হাঙ্গামা কমে গেল। কী সুন্দর ঘরে বসেই ছেলের রেমিটেন্সের টাকা আমি স্কুলের লোকদের, বাড়িতে আত্মীয় স্বজনকে পাঠাতে পারি। বিকাশ রেমিটেন্সের মাধ্যমে প্রবাসীদের পরিজনদের জীবন এখন অনেক সহজ, ঝামেলামুক্ত হয়েছে।’
এই সহজ জীবন যাপন করতে পেরে খুশী কক্সবাজারের মিজানুর রহমান। তিনি দক্ষিণ কোরিয়াতে থাকেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়মিত টাকা পাঠাতে হয়। আগে ব্যাংক, হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতেন। তখন নানা ঝামেলা পোহাতে হতো। ২০২০ সাল থেকে তিনি বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠান। জীবনের জটিল এক সময়ের কথা বলতে গিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার মা ক্যান্সারের রোগী ছিলেন। একবার ঢাকায় ডাক্তারের কাছে তাকে নিয়ে আসা হয়। সেই সময় তাৎক্ষণিক বেশ কিছু টাকার প্রযোজন হয়। আমি দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দেই। কয়েক মিনিটের মধ্যে আমার বাবা-ভাইয়ের কাছে মায়ের চিকিৎসার টাকা চলে আসে। এটা যে আমার কাছে কী রকম মানসিক প্রশান্তির ছিল কাউকে বলে বোঝাতে পারব না। আমার মতো এমন অনেকেই পরিবারের পাশে থাকতে পেরেছেন বিকাশের রেমিটেন্স সেবার মাধ্যমে।’
মিজানুর আরো জানান, বাবাকে টাকা পাঠাতে চাইলে বাবার বিকাশে, ভাইকে পাঠাতে চাইলে ভাইয়ের বিকাশ অ্যাকাউন্টে আবার স্ত্রীকে পাঠাতে চাইলে তার বিকাশ অ্যাকাউন্টেই টাকা পাঠাতে পারি।
দূরদেশে থেকে পরিবারের পাশে তাৎক্ষণিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে প্রশান্তিতে আছেন এখন অনেক প্রবাসীরাই। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা বৈধ প্রক্রিয়ায় আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে শীর্ষ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান বিকাশের মাধ্যমে প্রিয়জনের বিকাশ অ্যাকাউন্টে খুব সহজেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন টাকা।
এই প্রসঙ্গে বিকাশের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার আলী আহম্মেদ বলেন, ‘মোবাইলে রেমিটেন্স পাঠানোর সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে বিকাশ। এই নেটওয়ার্ক আরো সম্প্রসারিত করে প্রবাসীদের জীবন সহজ করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আর বিকাশে রেমিটেন্স পাওয়ার পর প্রবাসীর স্বজনরা সহজেই ক্যাশ আউট করতে পারেন, সেন্ড মানি, পে বিল, স্কুলের বেতন, কেনাকাটা, সেভিংস করা সহ অসংখ্য সেবা নিতে পারেন। যা তাঁদের জন্য স্বস্তির।’
২০১৮ সালে বিকাশ অ্যাকাউন্টে রেমিটেন্স গ্রহণ সেবা চালু হয়। প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যুষিত দেশগুলোর শীর্ষস্থানীয় মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে অংশীদারিত্ব থাকায় প্রবাসীরা এ সেবার প্রতি আগ্রহী হন। বিকাশে রেমিটেন্সের প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের আস্থার জায়গা হয়ে উঠছে বিকাশ।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ