বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৩১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
ট্রাইব্যুনালে ২২৭৬ নেতাকর্মীকে গুম-খুনের অভিযোগ বিএনপির চালের দাম বাড়ায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে, এটা সাময়িক: শেখ বশিরউদ্দীন অনির্দিষ্টকালের জন্য রেস্তোরাঁ বন্ধের হুমকি মালিকদের দেশে তিনদিন কম থাকবে গ্যাসের চাপ আদালতের নথির বস্তা মিলল ভাঙারির দোকানে, চা বিক্রেতা আটক মন্দিরে ঢোকার ফ্রি টোকেন পেতে হুড়োহুড়ি, ভারতে পদদলিত হয়ে নিহত ৬ ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ ভর্তি খালেদা জিয়া টিউলিপের উচিত এখন দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো: দ্য টাইমস বকশীবাজারে অস্থায়ী আদালতের এজলাস কক্ষে আগুন জামায়াত নেতা আজহারের মৃত্যুদণ্ডের রিভিউ শুনানি ২৩ জানুয়ারি এস আলমের দুই ছেলেসহ ৫৪ জনের নামে মামলা মালয়েশিয়ায় ৬৪ বাংলাদেশিসহ ১৫৩ অভিবাসী আটক একদিনে ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা কমে শৈত্যপ্রবাহের কবলে চুয়াডাঙ্গা সরকারের সংস্কার এজেন্ডাকে সমর্থন করে ইআইবি সাকিব বোলিং পরীক্ষায় ফেল, বিষয়টা ‘ভেরি শকিং’ বকশীবাজারে সড়কে শিক্ষার্থীরা, ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী গাজায় বর্বর হত্যাযজ্ঞ চলছেই, নিহত আরও অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি সাভারে অ্যাম্বুলেন্সে দুটি বাসের ধাক্কা, অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত ৪ যাত্রাবাড়ীতে বিপন্ন প্রজাতির হনুমান পাচারের সময় গ্রেপ্তার ২ ব্যারিস্টার আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তা করিয়েছিলেন টিউলিপ: রিপোর্ট

এখন শুধুই স্মৃতি

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় শনিবার, ২ জুন, ২০১৮
  • ৩৭২ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ, মো: হায়দার আলী, গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি: উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার উপজেলার  গ্রামবাংলার জনপ্রিয় গারুর গাড়ি এখন অধিকাংশ অঞ্চল থেকে বিলুপ্তির পথে। এখন ওই সব সামগ্রী রূপকথার গল্পমাত্র এবং বিলুপ্ত হয়ে স্থান পেয়েছে কাগজে কলমে, বইয়ের পাতায়।

মাঝে মধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় দু-একটি গরুর গাড়ি চোখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না। আধুনিক সভ্যতায় ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি হারিয়ে যেতে বসেছে। সে কারণে শহরের ছেলে-মেয়েরা দূরের কথা, বর্তমানে গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও গরুর গাড়ির শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়। আবার অনেক শহরে শিশু গরুর গাড়ি দেখলে বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করে গরুর গাড়ি সম্বন্ধে।

যুগ যুগ ধরে গরুর গাড়ি কৃষকের কৃষিক্ষেত্রের ফসল বপন এবং ফসল আনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাহন হিসেবে পরিচিত। গরুর গাড়ি হল দুই চাকাবিশিষ্ট গরু বা বলদে টানা এক প্রকার যান বিশেষ। এ যানে সাধারণত একটি মাত্র অক্ষের সাথে চাকা দুটি যুক্ত থাকে। সামনের দিকে একটি জোয়ালের সাথে দুটি গরু বা বলদ জুতে এ গাড়ি টানা হয়। সাধারণত চালক বসেন গাড়ির সামনের দিকে।

আর পিছনে বসেন যাত্রীরা। বিভিন্ন মালপত্র বহন করা হয় গাড়ির পিছন দিকে। বিভিন্ন কৃষিজাত দ্রব্য ও ফসল বহনের কাজে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল ব্যাপক। গ্রাম বাংলায় ঐতিহ্যগতভাবে গরুর গাড়ি এক দশক আগেও যাতায়াত ও মালবহনের কাজে অনেক ব্যবহৃত হত। অনুমান করা হয়, খ্রিস্টজন্মের ১৬০০ থেকে ১৫০০ বছর আগেই সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল, যা সেখান থেকে ক্রমে ক্রমে দক্ষিণেও ছড়িয়ে পড়ে।

উনবিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন জনপ্রিয় উপন্যাসেও দক্ষিণ আফ্রিকার যাতায়াত ও মালবহনের উপায় হিসেবে গরুর গাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এইচ. রাইডার হ্যাগার্ড’এর বিখ্যাত উপন্যাস ‘কিং সলোমনস মাইনস’ নামক উপন্যাসেও গরুর গাড়ি সম্বন্ধে বর্ণনা রয়েছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাতে রাতে বিশ্রাম নেওয়ার সময় বা বিপদে পড়লে তারা প্রায় গরুর গাড়িগুলোকে গোল করে সাজিয়ে এক ধরনের দুর্গ গড়ে তুলে তার মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করত। চেঙ্গিজ খানের নাতি বাতু খানের নেতৃত্বে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে যে মোঙ্গল আক্রমণ চলে সেখানে তার প্রতিরোধে স্থানীয় অধিবাসীদের দ্বারা গরুর গাড়ির ব্যবহার করা হয়েছিল। দুই যুগ আগে গরুর গাড়িতে চড়ে বর-বধু যেত।

গরুর গাড়ি ছাড়া বিয়ে হতো না। বিয়ে বাড়ি বা মাল পরিবহনে গরুর গাড়ি ছিল একমাত্র পরিবহন বাহন। বর পক্ষের লোকজন বরযাত্রী ও ডুলিবিবিরা বিয়ের জন্যে ১০ থেকে ১২টি গরুর গাড়ির ছাওনি (টাপর) সাজিয়ে শশুরবাড়ী ও বাবার বাড়ী আসা যাওয়া করতো। রাস্ত-ঘাটে গরুর গাড়ি থেকে পটকাও ফুটাতো। যে সব গৃরস্থ পরিবারের পরিবারের গাড়ি ছিল, তাদের কদরের সীমা ছিল না। কৃষকরা  প্রতিদিন ফজরের আজানের আগে গরুর গাড়িতে কখনো জৈব সার তথা গোবরের সার, কখনো গরুর খাবার ও লাঙ্গল-মই-জোয়াল নিয়ে যেত মাঠে। গাইত উঁচু সুরে গাইত, ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই, কত রব আমি পন্থের বিধি…’।

গরুর গাড়ীর চালক বা গাড়িওয়ালকে উদ্দেশ্য করে বলতো, ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই, আস্তে বোলাও গাড়ি, আরেক নজর দেখিবার নাও মুই দয়ার বাপের বাড়িরে গাড়িয়াল’।

৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটারের রাস্তা পাড়ি দিয়ে কৃষকেরা জমি চাষাবাদ এবং মালামাল বহনের জন্য গরুর গাড়ি বাহন হিসেবে ব্যবহার করতো। অনেক অঞ্চলে রাস্ত পাকা না থাকায় এক সময় যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করতো না। ফলে গরুর গাড়িই ছিল একমাত্র ভরসা। তবে বর্তমানে নানাধরণের মোটরচালিত যানের আধিক্যর কারণে অপেক্ষাকৃত ধীর গতির এই যানটির ব্যবহার অনেক কমে এসেছে। এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।

বর্তমান যুগ হচ্ছে যান্ত্রিক যুগ। মানুষ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের জন্য বাহন হিসেবে ব্যবহার করছে ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন মালগাড়ি। মানুষের যাতায়াতের জন্য রয়েছে মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি, বেবী ট্যাক্সি, অটো রিকশা ইত্যাদি। ফলে গ্রামাঞ্চলেও আর চোখে পড়ে না গরুর গাড়ি। অথচ গরুর গাড়ির একটি সুবিধা হলো, এতে কোনো জ্বালানি লাগে না। ফলে ধোঁয়া হয় না।  পরিবেশের কোনো ক্ষতিও করে না। এটি হচ্ছে, পরিবেশবান্ধব একটি যানবাহন।

শুধু ১ বৈশাখে ঘটা বাংলা নর্ববর্ষ পালন করলে, টাপর তোলা গরু-মহিষের গাড়ী বর-বধু সেজে পান্তা ইলিশ খেলে, মুড়ি, উখড়া, পাঞ্জাবী, পাইজাম, ধুতি পড়লে কিংবা সে দিন মাটির কলস, মাটির পাতিল, বাংলা নববর্ষ পালন করলে হবে না। প্রতিটি দিন এগুলো সংরক্ষন করতে হবে, ব্যবহার বাড়াতে হবে।

বাংলা৭১নিউজ/জেএস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com