চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে উৎপাদনে যেতে না পারায় বিশেষ করছাড় সুবিধা বাতিল হয়ে গিয়েছিল দেশি-বিদেশি মালিকানাধীন ছয়টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের। তবে, সরকারের চুক্তির কারণে এ সুবিধা দিতে বাধ্য হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শর্তসাপেক্ষে বিশেষ করছাড় সুবিধা এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম স্বাক্ষরিত এক স্ট্যাটিউটরি রেগুলেটরি অর্ডারের (এসআরও) মাধ্যমে এ সুবিধার কথা জানানো হয়েছে।
নতুন এসআরও অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হলে এবং ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করলে আয়ের ওপর ১৫ বছর করছাড় (বাণিজ্যিক উৎপাদনের তারিখ থেকে) পাবে।
এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত বিদেশি ব্যক্তিদের আয়ের ওপর আগমনের তারিখ থেকে তিন বছর করছাড় পাবে। একই সঙ্গে বৈদেশিক ঋণের সুদ, রয়্যালটি, বিভিন্ন ফি ও শেয়ার হস্তান্তরে মূলধনি মুনাফার ওপরও করছাড় পাবে কেন্দ্র।
তবে এ এসআরওতে দুটি শর্তযুক্ত করা হয়েছে। সেগুলো হলো— সঠিক হিসাব সংরক্ষণের পাশাপাশি আইনের সব বিধান পরিপালন করতে হবে। এ ছাড়া প্রাইভেট সেক্টর পাওয়ার জেনারেশন পলিসি অব বাংলাদেশ ১৯৯৬-এ নির্ধারিত সব শর্তপূরণ করতে হবে এবং সেই পলিসিতে বর্ণিত ব্যবস্থা অনুসারে কোম্পানি পরিচালিত করতে হবে।
এর আগে জারি করা এসআরওতে ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করলে আয়ের ওপর ১৫ বছর করছাড়ের সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা ছিল। নতুন এসআরও জারি করে বাণিজ্যিক উৎপাদনের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হলো।
জানা যায়, মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কারণে সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। করছাড়ের সুবিধা বহাল রাখতে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সময় দিতে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
চিঠিতে পিডিবি কর অব্যাহতির প্রয়োজনীয়তা, প্রকল্পের অর্থায়ন ও বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ, প্রকল্পের নগদ প্রবাহ ও বিদেশি বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও সরকারি রাজস্ব, উৎপাদন শুরু না করতে পারার কারণ, কর অব্যাহতি না পেলে সরকারের দায়বদ্ধতা এবং কর অব্যাহতি না পাওয়ার প্রভাব উল্লেখ করে করছাড়ের মেয়াদ বাড়াতে পুনরায় সুপারিশ করে।
নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আসতে না পারা ছয়টি কেন্দ্র হলো— বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ প্রকল্প।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এক হাজার ২২৪ মেগাওয়াটের এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট। কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের প্রকল্প।
পটুয়াখালীতে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) ও নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেডের (আরএনপিএল) এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র। পটুয়াখালীর পায়রায় রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) ও চীনের নরিনকো ইন্টারন্যাশনালের এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট এবং মাতারবাড়ীতে ওরিয়ন গ্রুপের ৬৩৫ মেগাওয়াট প্রকল্প। ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট উৎপাদনক্ষমতা ৭ হাজার ১৩৯ মেগাওয়াট।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ