গত কয়েকদিনের মতো আজো সাভারে করোনার টিকাগ্রহীতাদের উপচে পড়া ভিড়ে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। হাজারো মানুষের ঢল সামলাতে পুলিশ সদস্যদের দিশেহারা অবস্থা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে লাঠিপেটা করতেও দেখা যায়। তবুও অনিয়ন্ত্রিত।
এদিকে সাভারে মূল টিকাকেন্দ্র ছাড়াও আরো দুটি টিকাকেন্দ্র চালু থাকলেও সে বিষয়ে তেমন জানে না প্রত্যাশীরা। এদিকে দীর্ঘক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থেকে টিকা নিতে আসা অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাঁদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে আশার খবর হলো- সাভারে করোনার টিকাকেন্দ্রর সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সাভার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশে নবনির্মিতি সাভারের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যানেজমেন্ট (বিআইএইচএম) টিকাকেন্দ্রে এমন চিত্র দেখা গেছে। এদিকে জনস্রোতের কথা বিবেচনা করে এর মধ্যে টিকাকেন্দ্র বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে এই কেন্দ্রগুলো চালু হচ্ছে। যেখানে টিকা নিতে পারবেন।
ঘুরে দেখা যায়, টিকাকেন্দ্রে ঢোকার আগ থেকেই মানুষের ঢল। সেই ভিড় সড়ক পর্যন্ত। প্রায় এক কিলোমিটার। ফটকের ভেতরে হাজারো মানুষের উপস্থিতি। নারী ও পুরুষ সবাই একত্রে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। কেন্দ্রের সামনের মাইক থেকে বারবার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে ‘আপনারা পুলিশ ভাইদের আহত করবেন না’ ‘আপনারা শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালনদের আহত করবেন না’ ‘বিশৃঙ্খলা তৈরি করলে টিকা দেওয়া বন্ধ করে দেব’। কিন্তু এরপরও করোনার প্রথম ডোজ টিকাপ্রত্যাশীদের বিশৃঙ্খলা ঠিক করা যাচ্ছে না।
অনেকের ধারণা, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারির পর থেকে করোনা টিকার প্রথম ডোজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। তাই কষ্ট হলেও টিকা নিতে মরিয়া তারা। গত এক সপ্তাহ ধরে এমন পরিস্থিতি। এর মধ্যে চারজন টিকাপ্রত্যাশী অসুস্থ হলে তাঁদের হাসপাতালে ও টিকাকেন্দ্রের মেঝেতে চিকিৎসা দিতে দেখা যায়। এ ছাড়া ভিড় ঠেকাতে গিয়ে কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী আহত হন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সাভারের অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে নারীদের জন্য আলাদা টিকাকেন্দ্র চালু হচ্ছে। সেখানে প্রায় ১৫টি টিকার বুথ করা হয়েছে। আর সাভারের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যানেজমেন্ট (বিআইএইচএম) যেটা চলমান আছে সেখানে পুরুষদের টিকা দেওয়া হবে।
অন্যদিকে সাভার পৌরসভার আবেদনের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পৌরসভা কেন্দ্রে নারী-পুরুষ উভয়ই টিকা নিতে পারবনে। এ ছাড়া সাভারের আমিনবাজার ২০ শয্যা হাসপাতালে গত এক সপ্তাহ ধরে করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে ও আশুলিয়ার জিরানী কোরিয়া মৈত্রী হাসপাতালেও এক সপ্তাহ ধরে করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে সাভার মর্নিং গ্লোরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও সাভার ক্যান্টেনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও সাভারের বেপজা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, এই তিন কেন্দ্রে করোনার ফাইজারের দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া উপজেলার বিআইএইচএম ও সাভার গার্লস স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য ফাইজারের প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হচ্ছে। আর অন্যদিকে সাভার ডিইপিজেডে শ্রমিকদের জন্য করোনার টিকা প্রদান চলমান রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, পর্যাপ্ত টিকা মজুদ রয়েছে। গত সপ্তাহখানেক ধরে প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষকে টিকা দিচ্ছি। সবাই টিকা পাবেন। আমাদের এখানে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ৬০ জন নার্স কাজ শুরু করবেন।
কিন্তু আমাদের সহযোগিতা না করলে তো এত মানুষকে একসঙ্গে টিকা প্রদান করা সম্ভব নয়। তাই আমি টিকাপ্রত্যাশীদের সহযোগিতা কামনা করছি। আর ২৬ ফেব্রুয়ারি পরেও এখানে করোনার প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া যাবে। ফলে টিকাপ্রত্যাশীদের আতঙ্কের কিছু নেই।
তিনি আরো বলেন, চাইলে হঠাৎ করে করোনার টিকার কেন্দ্র বাড়ানো সম্ভব নয়। এখানে প্রশিক্ষিত জনবল প্রয়োজন। নানা নিয়ম-কানুনসহ টিকা একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ রাখতে হয়। পাশাপাশি নিরাপত্তার স্বার্থে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ থাকতে হয়। ফলে চাইলেও অনেক সময় সহজেই একটি কেন্দ্র করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী মঈনুল ইসলাম বলেন, সুষ্ঠুভাবে টিকা গ্রহণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহযোগিতায় পুলিশ কাজ করছে। মানুষের ভিড় সামলাতে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োজিত করা হয়েছে। আমরা সর্বাত্নক চেষ্টা করছি যাতে করে মানুষ সুশৃঙ্খলাভাবে টিকা নিতে পারে। তবে টিকাপ্রত্যাশীদের আরো আন্তরিক ও ধৈর্য নিয়ে আসা উচিত।
প্রসঙ্গত, গতকাল মঙ্গলবারও বিশৃঙ্খলার মধ্যে ধাক্কাধাক্কির সময় পড়ে গিয়ে তিনজন স্বাস্থ্যকর্মীসহ পুলিশের লাঠিপেটায় অন্তত আটজন টিকাপ্রত্যাশী আহত হয়েছিলেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি