রাজধানী হচ্ছে ইয়াবা ও গাঁজার বড় বাজার। এক দিনের পরিসংখ্যানে এর বাস্তব চিত্র বোঝা যায়। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীতে জব্দ করা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার ইয়াবা ও ১৬ কেজি গাঁজা। আর এসব ইয়াবার একটি অংশ আনা হয় আকাশপথে পাকস্থলীতে করে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, রাজধানীতে ইয়াবা ও গাঁজার চালান প্রতিদিন বাড়ছে। তিনি বলেন, যা ধরা পড়ে তার কয়েক গুণ বেশি আসছে এসব মাদক।
কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, ইয়াবার প্রধান রুট কক্সবাজার। ক্রসফায়ার বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আর রাজধানী বরাবরই ইয়াবা বা গাঁজার বড় বাজার। এখানে ইয়াবা ও গাঁজাসেবীর সংখ্যাও বেশি। তিনি আরো বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ইচ্ছা করলেও পর্যাপ্তসংখ্যক অভিযান চালাতে পারে না। তাদের জনবল ও যানবাহনেরর সংকট রয়েছে। অভিযান চালাতে হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিতে হয়।
রাজধানীতে ইয়াবা ও গাঁজার চালান বৃদ্ধির ব্যাপারে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রো (দক্ষিণ) অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মানজাহারুল ইসলাম বলেন, লকডাউন উঠে যাওয়ার কারণে এখন বিভিন্ন পথে রাজধানীতে আনা হচ্ছে ইয়াবা ও গাঁজার চালান। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানুষের চিত্তবিনোদনের সুযোগ বেড়ে গেলেই মাদকের চাহিদা বাড়ে। আর মাদকের চাহিদা থাকার কারণে বিভিন্ন উপায়ে মাদক কারবারিরা ইয়াবা ও গাঁজা আনে।
পাকস্থলীতে বিপুল পরিমাণে ইয়াবা: গতকাল কক্সবাজার থেকে পাকস্থলীতে করে প্রায় ৩ হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় আসার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ।
এ ব্যাপারে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মোহাম্মদ জিয়াউল হক বলেন, গ্রেফতার হওয়া যাত্রী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ (৪২) সোমবার রাতে ইউএস বাংলার কক্সবাজার ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন। তিনি বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি কক্সবাজার থেকে ঢাকার ফ্লাইটে ওঠার আগেই ২ হাজার ৬৭০ পিস ইয়াবা গিলে ফেলেন। তার বাড়ি কক্সবাজারের রামু উপজেলায়। সোমবার রাত ৮টায় কক্সবাজার থেকে ঢাকায় নামার পর বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ তাকে সন্দেহবশত আটক করে। এ সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি পাকস্থলীতে ইয়াবা বহনের কথা স্বীকার করেন। এক্সরে পরীক্ষা করার পর অভিযুক্তের পাকস্থলীতে ইয়াবার অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়া যায়। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্তকে থানায় সোর্পদ করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগের একটি টিম গতকাল ৩০ হাজার পিস ইয়াবাসহ চার জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে ইমন শেখ, স্বপন ব্যাপারী, সানাউল্লা খান ওরফে বাবু, মোছা. লাভলী আক্তার।
একই দিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দ (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগ। উদ্ধার করা হয় ৫ হাজার পিস ইয়াবা। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে মো. হাসান ওরফে ইউনুছ ও শফিক (২৪)।
গাঁজাসহ গ্রেফতার: যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ১০ কেজি গাঁজাসহ রনি ওরফে কালু নামে এক মাদক কারবারীকে গ্রেফতার করে। অপর দিকে বংশাল থানার পুলিশ একই দিন মিটফোর্ড এলাকা থেকে চার কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার করে ইব্রাহিম খলিল কনক ও রুবেল নামে দুই মাদক কারবারিকে।
অন্যদিকে খিলগাঁও এলাকা থেকে ১ কেজি ১০০ গ্রাম গাঁজাসহ গ্রেফতার হয় মাদক কারবারি লিটন মিয়া ও মুনি। পুলিশের জিজ্ঞাসবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, তারা কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকার সীমান্ত থেকে গাঁজার চালান সংগ্রহ করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করত।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ