শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
হাসিনার অন্যায়ের প্রতিবাদে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন জিএম কাদের এস আলমের সময়ে নিয়োগ পাওয়া ৫৮৯ জনকে চাকরিচ্যুত করলো এসআইবিএল কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ বিয়ের দুই মাস পরই মা হতে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন অ্যামি নওগাঁয় বেড়েছে চালের দাম স্পেনে আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা দেড়শ ছাড়ালো কাল মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা, সাগরযাত্রায় প্রস্তুত জেলেরা ধানমন্ডিতে বাসায় ঢুকে লুটপাটের চেষ্টা, যৌথ অভিযানে গ্রেফতার ১৩ ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ খামেনির আজ থেকে কাঁচাবাজারেও নিষিদ্ধ পলিথিন বদির ম্যানেজার জাফর র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ঢাকাসহ ৪ বিভাগে বৃষ্টি ঝরতে পারে লেবানন থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা, থাই ও ইসরায়েলি নাগরিকসহ নিহত ৭ নড়াইলে ৩ গরু চোরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, আসামি ২ হাজার আমিরাতে সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ আরও দুই মাস বাড়লো যে ৫ পরিবর্তন আসছে পাঠ্যবইয়ে রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনায় সেনা সদস্যসহ নিহত ২ সাইবার হামলা: সতর্ক করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা জারি কমলো ডিজেলের দাম, অপরিবর্তিত অকটেন-পেট্রোল সাফজয়ী নারী ফুটবল দলকে ১ কোটি টাকা দিলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা

ইলিশের কেজি ২০০ টাকা

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৯
  • ৮৬ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ,(বরিশাল)প্রতিনিধি: বঙ্গোপসাগর ও দেশের নদ-নদীতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বুধবার রাত থেকে শুরু হয় ইলিশ ধরা। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে থেকে বাজারে আসতে শুরু করে ইলিশ। প্রথম দিনেই বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের ইলিশ মোকাম ইলিশে সয়লাব হয়ে যায়। এ অবস্থায় ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে ইলিশ।

প্রথমদিনে এতো ইলিশ ধরা পড়ায় জেলেরা যেমন খুশি, তেমন বাজারেও মাছের দেখা মেলায় ব্যবসায়ীরা খুশি। তবে হঠাৎ ইলিশের কেজি ২০০ টাকা হয়ে যাওয়ায় কেউ কেউ অখুশি।

সরেজমিনে দেখা যায়, কীর্তনখোলা নদী থেকে একের পর এক ইলিশবোঝাই নৌকা, ট্রলার ও স্পিডবোট এসে ভিড়ছে ঘাটে। সঙ্গে সঙ্গে সেসব নৌকা ঘিরে ধরছেন পোর্ট রোড ইলিশ মোকামের আড়তদাররা। রীতিমতো ইলিশের উৎসব শুরু হয়েছে। সরগরম হয়ে উঠেছে ইলিশের বাজার।

আড়তদাররা ঘাট থেকে ইলিশ কিনে স্তূপ করে রেখেছেন আড়তের সামনে। এ অবস্থায় আড়তগুলোর সামনে প্রচুর ভিড়। সেখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দরদাম করছেন খুচরা ক্রেতারা। বিকিকিনির ধুম পড়েছে নগরীর পোর্ট রোডের ইলিশ মোকামে।

প্রচুর ইলিশের সরবরাহ থাকায় দামও কম। ক্রেতারাও খুশি। ইলিশ কিনছেন যে যার সাধ্যমতো। তবে সাধারণ ক্রেতাদের থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। ইলিশ কেনার দিক থেকে তারাই ছিলেন এগিয়ে। ইলিশ কিনে ককশিটে বরফ দিয়ে প্যাকেটজাত করছেন শ্রমিকরা। প্রতিটি আড়তের সামনে প্রচুর ইলিশ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। আড়তদার, মৎস্য শ্রমিক ও ক্রেতাদের ভিড়ে পুরো এলাকা সরগরম। ভিড় ঠেলে এক আড়ত থেকে অন্য আড়তে যেতে হিমশিম খেতে হয় তাদের।

ভিড়ের কারণ হিসেবে ক্রেতারা বলছেন, ২২ ইলিশ ধরা ও কেনাবেচা নিষিদ্ধ ছিল। মাস খানেক আগেও বেশি দামের কারণে ইলিশের পাশে ভিড়তে পারেনি মানুষ। কিন্তু এখন সেই ইলিশ প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে। হাফ কেজি ওজনের এক হালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। তবে ছোট সাইজের ইলিশের কেজি ২০০ টাকা।

কম দামে ইলিশ বিক্রির খবর পেয়ে পোর্ট রোডে ইলিশ কিনতে আসা হাবিবুর রহমান সোহেল বলেন, হাফ কেজি ওজনের ৮টি ইলিশ মাত্র ১৬০০ টাকায় কিনেছি। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এগুলোর দাম ছিল সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। পাশাপাশি ছোট ইলিশের কেজি ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বাজারে প্রচুর ইলিশ আসায় দাম কমেছে।

তবে জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর ধরা পড়া ইলিশের মধ্যে অধিকাংশের পেটে ডিম। সেক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা আরও ১৫ দিন পিছিয়ে, অর্থাৎ ২২ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২২ দিন করলে আরও ভালো ফল পাওয়া যেত। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি, আবহাওয়া প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় ইলিশের প্রজনন সময়কাল পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রতি বছরই এই কার্যক্রম হাতে নেয়ার আগে জেলেদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও মাঠপর্যায়ে আরও বাস্তব ধারণা নিয়ে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

ছোমেদ আলী নামে স্থানীয় এক জেলে বলেন, জাল ফেললেই ২০-৩০ কেজি, কখনো এক মণ ইলিশ পাওয়া যায়। এর মধ্যে অধিকাংশ ইলিশের পেটে ডিম। পাশাপাশি জাটকাও রয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞার সময় আরও বাড়ানো উচিত ছিল।

বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের ইলিশ মোকামের ‘টিপু ফিস সাপ্লাই’ আড়তের ম্যানেজার মো. জুয়েল বলেন, অভিযান আরও ১৫ দিন পরে দিলে ভালো হতো। কারণ জেলেদের জালে ধরা পড়া বেশির ভাগ ইলিশের পেটেই ডিম।

বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের ইলিশ মোকামের একাধিক আড়তদার জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত আড়াই হাজার মণ ইলিশ মোকামে আমদানি হয়েছে। এজন্য ইলিশের দাম হঠাৎ কমে গেছে।

এদিকে, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার প্রায় ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে বিপুল পরিমাণ ইলিশের আমদানি হওয়ায় অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা নিয়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোকামের কয়েকজন আড়তদার বলেন, গ্রামগঞ্জে বিদ্যুৎ আছে। অনেক বাড়িতে ফ্রিজ আছে। মৎস্য শিকারিরা নিষেধাজ্ঞা চলাকালে চুরি করে ইলিশ মাছ ধরেছে। তবে প্রকাশ্যে বিক্রি করতে পারেনি। গ্রামের কিছু ব্যবসায়ী জেলেদের কাছ থেকে কম দামে ইলিশ কিনে ফ্রিজে রেখেছিলেন। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার সুযোগে সেসব ইলিশ বাজারে নিয়ে এসেছেন।

সকাল ৮টায় ভোলার ভেদুরিয়া থেকে আসা একটি ইলিশভর্তি ট্রলার পোর্ট রোডের ঘাটে ভিড়ে। ট্রলার চালক হাসান হাওলাদার বলেন, ১৩০ মণ ইলিশ রয়েছে আমার ট্রলারে। বুধবার রাত ৮টার পর আমার ট্রলারে ইলিশ লোড শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। এরপর ভোরে মাছভর্তি ট্রলার নিয়ে মোকামে রওনা হই।

বরিশাল আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অজিত কুমার দাস মনু বলেন, ইলিশের সরবারহ প্রচুর। নিষেধাজ্ঞার পর প্রথম দিনে এত পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ার রেকর্ড এটি। অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ক্রেতাদের ভিড় ছিল বেশি। ইলিশের সরবারহ বেশি থাকায় কম দামে বিক্রি হচ্ছে। ইলিশের আমদানিও বেশি। দুপুর পর্যন্ত আড়াই হাজার মণ ইলিশ মোকামে এসেছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ইলিশ আমদানির পরিমাণ সাড়ে তিন হাজার মণ ছাড়িয়ে যাবে।

অজিত কুমার দাস মনু বলেন, দেড় কেজি সাইজের ইলিশের মণ বিক্রি হচ্ছে ৬০ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়ে ১৫০০ টাকা। এক কেজি সাইজের ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছে ৩২ হাজার টাকায়। সে হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়েছে ৮০০ টাকা। রফতানিযোগ্য এলসি আকারের (৭০০ থেকে ৯০০ গ্রাম) প্রতি মণ ২৪ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়ে ৬০০ টাকা। হাফ কেজি বা ভেলকা আকারের (৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম) ইলিশের মণ ১৬ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়ে ৪০০ টাকা। গোটরা আকারের (২৫০ গ্রাম থেকে ৩৫০ গ্রাম) প্রতি মণ ১২ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়ে ৩০০ টাকা এবং জাটকা প্রতি মণ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার টাকায়। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম মাত্র ২০০ টাকা।

তিনি আরও বলেন, আজ অনেক কম দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। গরিব-বড়লোক সবাই এ দাম দিয়ে ইলিশ কিনতে পারছেন। এ কারণে মোকামে ক্রেতাদের ভিড়।

২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে অজিত কুমার দাস মনু বলেন, ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি সফল হয়নি। ২২ দিন পাইকারি বাজারে ইলিশ বিক্রি না হলেও বাগানে-জঙ্গলে ইলিশ বিক্রি হয়েছে। অভিযান পুরোপুরি সফল করতে হলে মৎস্য অধিদফতর ও প্রশাসনকে আরও আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।

বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ বলেন, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ইলিশ শিকার বন্ধে জেলায় ৩৫টির বেশি টিম কাজ করেছে। এসব টিমের সদস্যরা সার্বক্ষণিক নদীতে টহলে ছিল। এছাড়া নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা নদীতে টহলে ছিল। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ শিকারের দায়ে অভিযানের গত ২২ দিনে বরিশাল জেলায় ৫৩৩ জন ব্যক্তিকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। ইলিশ জব্দ করা হয়েছে ছয় হাজার ২৯০ কেজি।

নিষেধাজ্ঞার সময়ে মাছ কেনাবেচার প্রসঙ্গে আবু সাইদ বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় প্রকাশ্যে ইলিশ বিক্রি হয়েছে এ ধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। গোপনে ইলিশ বিক্রি হয়ে থাকতে পারে। অনেক দুর্গম এলাকা রয়েছে। সেখানে পৌঁছাতে অনেক সময় লেগে যায়। সে সুযোগে হয়তো অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব কাজ করেছেন।

বাংলা৭১নিউজ/পিআর

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com