ভূমধ্যসাগরে ৩৫ যাত্রী নিয়ে স্পিডবোট ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ২৮ জনের মধ্যে ১৫ জনই নরসিংদীর। গত ২৭ জানুয়ারি স্পিডবোড ডুবির ঘটনায় বেঁচে দেশে ফেরা নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জের ইউসুফ মৃধা এ তথ্য জানান। তিনি বর্তমানে রাজধানীর হাজি ক্যাম্পে হোম কোয়ারিন্টিনে আছেন। লিবিয়া থেকে স্পিডবোটে করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওযার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
রবিবার (৬ মার্চ) এ ঘটনায় উপজেলার আমিরগঞ্জ এলাকার দুই দালাল মো. তারেক মোল্লা ও লিবিয়া প্রবাসী মনির চন্দ্র শীলের বিরুদ্ধে রায়পুরা থানায় নিখোঁজ আশিষ, আল আমিন ও নাদিমের পরিবার লিখিত অভিযোগ করে।
ইউসুফ মৃধা জানান, ২৭ জানুয়ারি লিবিয়ার স্থানীয় সময় ৮টার দিকে দুই মিসরীয় চালক তাঁদের ৩৫ জনকে নিয়ে ইতালির উদ্দেশে রওনা হয়। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় পড়ে যাওয়া একজনকে তুলতে গিয়ে স্পিডবোডটি উল্টে যায়। ওই সময় তিনিসহ আরো সাতজন উল্টো স্পিডবোটের ওপরে অবস্থান নেয়। বাকিরা টেউরের ধাক্কায় ভেসে যায়। তীব্র ঠাণ্ডায় ১১ ঘণ্টা ভেসে থাকার পর কোষ্টগার্ডের সদস্যরা তাঁদেরকে উদ্ধার করে। তবে তীরে উঠার আগেই ঠাণ্ডায় জমে একজনের মৃত্যু হয় বলে জানান তিনি।
নরসিংদীর নিখোঁজ ১৫ জন হলেন- রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ মির্জানগর পূর্বপাড়া এলাকার ওসমান গণির ছেলে এস এম নাহিদ (২৮), হাসনাবাদ বাজারের অনিল সূত্রধরের ছেলে আশিষ সূত্রধর (২২), হাইরামা ইউনিয়নের কবির মিয়ার ছেলে শাওন মিয়া (২২), আগারনগর এলাকার আব্দুল করিম ভূঁইয়ার ছেলে ইমরান ভূঁইয়া (২১), বালুয়াকান্দি এলাকার সবুজ মিয়া (৩৮), দড়ি হাইরামার ইয়াকুব আলীর ছেলে সেলিম (৩৪), ডৌকারচর ইউনিয়নের সোবহান সরকারে ছেলে নাদিম সরকার (২২), বাচ্চু ফরাজীর ছেলে আল আমিন ফরাজী (৩৩) ও আলমগীর সরকার।
বেলাব উপজেলার, আল আমিন, হালিম মিয়া, বিপ্লব মিয়া, সল্লাবাদ ইউনিয়নের ইব্রাহীমপুর এলাকার ইউসুছ মিয়ার ছেলে সালাউদ্দিন, হাবিবুর রহমানের ছেলে শরিফুল ইসলাম ও নারাণপুর ইউনিয়নের দুলালকান্দি এলাকার নুরুল ইসলামরে ছেলে মতিউর রহমান।
ইউসুফ মৃধা বলেন, ২৫ জনের ধারণক্ষমতার স্পিডবোটে আমরা ছিলাম ৩৫ জন। লাইফ জ্যাকেট বা কোনো ধরনের সেফটি ইকুইপমেন্ট আমাদের কাউকে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
নিখোঁজ হওয়া এমন চারজনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় দালাল তারেক মোল্লার সঙ্গে সাড়ে আট লাখ টাকায় ইতালি যাওয়ার চুক্তি হয়। দেশ ছাড়ার আগে ছয় লাখ টাকা দালালকে দেওয়া হয়। আর বাকি টাকা ইতালি পৌঁছার পর দেওয়ার কথা ছিল।
নিখোঁজ আশিষ সূত্রধরের ভাই আনন্দ জানান, তারেক মোল্লা যুবকদের ইতালি যেতে প্রলোভন দেখাত। লিবিয়ার ত্রিপোলিতে থাকা তার বন্ধু মনির চন্দ্র শীল দালালের এজেন্ট হয়ে কাজ করতে তিনি। তাদের সঙ্গে সাড়ে আট লাখ টাকায় ইতালি যাওয়া চুক্তি হয়। দেশ ছাড়ার আগে সাড়ে ছয় লাখ টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা ইতালি পৌঁছার পর পরিশোধের কথা ছিল।
তিনি আরো বলেন, দুবাই ও মিসর হয়ে লিবিয়ার বেনগাজীতে নেওয়া হয় আশিষকে। পরে সেখান থেকে ত্রিপলী নিয়ে বেশ কিছুদিন রাখা হয়। গত ২৭ জানুয়ারি আশিষ শেষ বারের মতো ফোন করে জানান, রাতে স্পিডবোটে করে তাদেরকে ইতালি পৌঁছে দেওয়া হবে। গত চার দিন আগে দেশে ফেরা ইউসুফের মাধ্যমে জানতে পারি স্পিডবোট ডুবির ঘটনা। পরে ভাইয়ের সন্ধান চেয়ে তারেক মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান আশিষ এখনো জীবিত আছে।
ভূমধ্যসাগরে স্পিডবোট ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ নাদিম সরকারের ভাই শামীম সরকার জানান, বৈধ পথে ইতালি পাঠানোর কথা থাকলেও, দালালরা অবৈধ পথে পাঠায়। লিবিয়াতে আমার ভাইসহ বাকিদের একটি রুমে দরজা জানালা বন্ধ করে রাখা হয়। দিনে শুধু এক বেলা তাদেরকে খেত দিত।
দালাল মনির চন্দ্র শীলের সঙ্গে সাড়ে আট লাখ টাকার চুক্তিতে ইতারি উদ্দেশে দেশ ছাড়েন বেলাব উপজেলার সালাউদ্দিন। তার ভাই ফরহাদ জানান, গত বছরের ২ ডিসেম্বর লিবিয়ায় পৌঁছান সালাউদ্দিন। গত ২৭ জানুয়ারি পর ভাইয়ের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। পরে জানতে পেরেছি স্পিডবোটটি ভূমধ্যসাগরে ডুবে গেছে।
বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন জানান, নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা যদি সহযোগিতা চাই। তবে তাদেরকে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছেন বলে জানান তিনি।
সহকারি পুলিশ সুপার (রায়পুরা সার্কেল) সত্যজিৎ কুমার ঘোষ জানান, এ ব্যাপারে একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাক্ষেপে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।
বাংলা৭১নিউজ/এসএম