বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: প্রিয়া প্রকাশ ওয়ারিয়ারের প্রথম অভিনীত একটি সিনেমার ভিডিও ক্লিপ সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছিলো যে বলা হয় সেসময় ভারতেরই যেন ‘দম বন্ধ হয়ে’ গিয়েছিলো।
এও বলা হয়, সাম্প্রতিক কালে ভারতীয় জনগণ ইন্টারনেটে যে ব্যক্তির নাম লিখে সবচেয়ে বেশি সার্চ করেছে তিনি তাদেরই একজন। তাকে বলা হচ্ছিলো ‘ভারতের জাতীয় ক্রাশ’ যার প্রেমে গোটা ‘ভারতই হাবুডুবু খাচ্ছিলো।’
দক্ষিণ ভারতীয় ওই সিনেমার ভিডিও গানটির দৃশ্যে ওই কিশোরী যখন তারই সহপাঠী এক কিশোরকে দেখে ‘চোখ মারে’ তখন শুধু ভারতের কিশোর কিশোরীদেরই নয় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সেই মুহূর্তটি যেনো ঢেউ তুলে দিয়েছিলো পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ছেলেমেয়েদের হৃদয়েও। এমনকি এই ভিডিওটি ভারতের ‘চিরশত্রু’ দেশ বলে পরিচিত পাকিস্তানের অনলাইনেও ভাইরাল হয়েছিলো।
এই ভিডিওর কল্যাণে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে উঠেন কেরালার নবাগত এই কিশোরী কলেজ ছাত্রী প্রিয়া প্রকাশ ওয়ারিয়ার। বিবিসির সাথে তিনি তার এই ভিডিওটি নিয়ে কথা বলেছেন। প্রিয়া প্রকাশ ওয়ারিয়ার বলেছেন, তিনি কল্পনাও করতে পারেন নি যে এই ভিডিওটা এরকম আলোড়ন তুলতে পারে।
“এটা রাতারাতি হয়েছে। আমি তো এরকম কিছু আশা করি নি। আমরা ভেবেছিলাম ভিডিওটা হয়তো শুধু কেরালাতে আলোচনার জন্ম দিতে পারে। কিন্তু আমরা কখনোই ভাবিনি যে এটা এমন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও চলে যেতে পারে,” বলেন তিনি।
গানের একটি জায়গায় দেখা যাচ্ছে প্রিয়া তারই স্কুলের সহপাঠীকে ভুরু নাচিয়ে চোখ মারছেন। ইন্টারনেটে গানটির যে সিকোয়েন্স টিজার হিসাবে দেওয়া হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে একটি কো-এডুকেশন স্কুলের অনুষ্ঠানে গানটি গাইছেন এক শিল্পী। আর হলে দাঁড়িয়ে ছাত্রছাত্রীরা সেটা মন দিয়ে শুনছে।
হঠাৎই এক ছাত্রীর চোখ পড়ে যে তার দিকে তাকিয়ে আছে বয়সে এক বছরের বড় এক ছাত্র – শুধুমাত্র ভুরু নাচিয়ে কয়েক সেকেন্ডের ভাব বিনিময় হয় দু’জনের মধ্যে।
তারপরে মেয়েটিও ওই ছাত্রের দিকে তাকিয়ে চোখ মারে। মেয়েটির ঠোট চাপা হাসি, আর ছাত্রটি আনন্দে এতটাই আত্মহারা যে সে প্রায় পড়েই যাচ্ছিল।
অষ্টাদশী এই কিশোরী অভিনেত্রী চোখ মারার সময় তার মুখে যেরকম এক্সপ্রেশন ফুটিয়ে তুলেছিলেন তাতে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। বিশেষ করে তার ভ্রু নাচিয়ে চোখ মারার ভঙ্গিটি অনেকের কাছেই ছিলো একেবারে অন্য রকমের।
“লোকজন এই চোখ মারা নিয়েই বেশি কথা বলেছে। তারা আমাকে ‘চোখ মারার রানী’, ‘চোখ মারার সেনসেশন’ ইত্যাদি বলেও ডাকছিলো। আমি মনে করি, মানুষ যেটা বলতে চায় আজকালকার দিনে সেটা সে সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানিয়ে দেয়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে, বলে টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে।”
প্রিয়া প্রকাশ ওয়ারিয়ার বলেন, “মানুষ এখন নিজেদের আবেগ অনুভূতির কথা প্রকাশ করতে গিয়ে প্রচুর স্মাইলি ব্যবহার করে। এখন তারা সামনা সামনি এসব বিষয়ে কথা বলে না। কিন্তু আমি যখন ওই ভিডিওতে ব্যক্তিগতভাবে এরকম করে চোখ মারি তখন লোকেরা এটাকে পছন্দ করে ফেললো।”
তবে সবাই যে এই চোখ মারার ভিডিওটিতে মুগ্ধ হয়েছে তা কিন্তু নয়।
ভারতীয় মুসলিমদের কয়েকটি গ্রুপ অভিনেত্রী প্রিয়া এবং এই সিনেমার নির্মাতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। তাদের অভিযোগ ভিডিওটিতে যে লোক সঙ্গীতটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটা আসলে নবী মোহাম্মদের স্ত্রী খাদিজাকে উদ্দেশ্য করে গাওয়া হয়েছিলো।তবে উচ্চতর আদালত সুপ্রিম কোর্ট মামলাটিকে খারিজ করে দিয়েছে।
কিশোর প্রেমের কাহিনীর উপর ভিত্তি করে মালায়লাম ভাষায় নির্মিত এই সিনেমাটির নাম ‘ওরু আদার লাভ’ যেখানে প্রিয়া প্রকাশ ওয়ারিয়ার একজন ছাত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
‘সোশাল মিডিয়া যদি না থাকতো তাহলে আমার এই ভিডিওটা এরকম ভাইরাল হতো না। লোকজন এই ভিডিওটির কথা হয়তো জানতেও পারতো না,” বলেন তিনি।
তবে এই ঘটনায় প্রিয়া খুব খুশি কারণ এই ভিডিওটির মাধ্যমে সারা বিশ্বের লোকজন ভারতের আঞ্চলিক ছবি সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানতে পেরেছে।
“যখনই ভারতীয় ছবির কথা বলা হয় তখন সবার প্রথমে মনে হয় বলিউডের কথা। কিন্তু এই বলিউডের বাইরেও আরো বহু সিনেমার বড় বড় শিল্প আছে- মালায়লাম, তেলেগু, তামিল, কান্নাডা। সেখানে অনেক ভালো ভালো সিনেমাও হয়।”
প্রিয়া অভিনীত ‘ওরু আদার লাভ’ ছবিটি এ বছরের শেষের দিকে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/বিবিসি বাংলা/পিকে