বাংলা৭১নিউজ, মাগুরা প্রতিনিধি: প্রতি চার বছর পর পর শুরু হয় বিশ্বকাপ ফুটবল। আর এ ফুটবল উন্মাদনায় মেতে উঠে সারা বিশ্ব। বিশ্বকাপ ফুটবলের এ উন্মাদনায় বাংলাদেশের দর্শকরা মেতে ওঠে নানা রঙে, নানা আয়োজনে। সেই আয়োজনকে আরো সুন্দর ও মনোমুগ্ধ করতে এবার মাগুরা সদরের ঘোড়ামারা গ্রামের আমজাদ হোসেন তৈরি করেছেন সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘের জার্মানীর পতাকা। যা ইতিমধ্যে মাগুরা জেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। তার পতাকাটি দেখতে প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ ভিড় করছেন তার বাড়িতে ।
জার্মান ফুটবল ভক্ত আমজাদ হোসেন জানান, ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি তার খুব ভালোবাসা। বিশ্বকাপ ফুটবল এলেই তিনি খেলা দেখতে ছুটে যেতেন বিভিন্ন স্থানে। জার্মানীর খেলা তার খুব পছন্দ বিধায় তিনি জার্মানীর পক্ষে অনেক আগে থেকেই।
পতাকা সর্ম্পকে তিনি বলেন, তিনি সামান্য একজন কৃষক। কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারপরেও ফুটবলের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা আর জার্মান দেশকে ভালোবেসে ২০১৪ সালে নিজের ৩০ শতক জমি বিক্রি সাড়ে তিন কিলোমিটার পতাকা তৈরি করেছিলেন। সেই পতাকাটি তিনি তখন মাগুরা শহরের প্রর্দশন করেন এবং তখন বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হয়।
সেই সময় এ পতাকাটি তৈরি করতে তার খরচ হয়েছিল ৫ লক্ষ টাকা। আর ২০১৪ সালে যখন ব্রাজিলের মাঠে জার্মানী বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হলো তখন তিনি নিজেকে সার্থক মনে করলেন। জার্মানীর এ চ্যাম্পিয়নে আনন্দে উচ্ছ্বাসে নেচে গেয়ে তারা জার্মান ভক্ত জেলার মানুষকে জানিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে তার এ পতাকা তৈরির খবরটি যখন মিডিয়ায় প্রকাশ হলো তখন বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মানির হাই কমিশনার ড. ফারদাভান ওয়াসির নজরে পড়লে তিনি তাকে ঢাকা ডেকে পাঠান।
তিনি ঢাকায় গিয়ে তার সাথে দেখা করেন। তিনি তাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, তিনি এ খরবটি তার দেশে জানিয়ে দেব। আমি তাকে আমার জেলা মাগুরাতে আসার আমন্ত্রণ জানালাম ।
২০১৪ সালের জুলাই মাসে জার্মান রাষ্ট্রদূত আমার আমন্ত্রণে মাগুরা স্টেডিয়ামে আসলেন। সেই সময় এক সংর্বধনা অনুষ্ঠানে তিনি আমাকে একটি সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করলেন।
আর বললেন, আপনাকে জার্মান ফুটবল এসোসিয়েশনের ফ্যান ক্লাবের সদস্য করা হয়েছে। পরবতীতে সেই ফ্যান ক্লাবে আপনাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
আসন্ন ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ আয়োজন সম্পর্কে আমজাদ হোসেন আরো বলেন, তিনি এবার জার্মানীর পতাকাটি আরো ২ কিলোমিটার বৃদ্ধি করেছেন। এখন পতাকাটির দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার। আগামী ৫ জুন সদও উপজেলার নিশ্চিতিপুর হাইস্কুল মাঠে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটারের জার্মান পতাকাটি প্রদর্শন করা হবে।
বাড়তি ২ কিলোমিটার পতাকা তৈরিতে তার খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ জেতার জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেছেন।
সদরের ঘোড়ামারা গ্রামের ফুটবল ভক্ত নাসির হোসেন বলেন, আমজাদ ভাই আমাদের গ্রামের একজন ফুটবলপ্রেমী মানুষ। তিনি নিজের জমি বিক্রি করে পতাকা করেছেন। যেটি আমাদের জেলাসহ সারাদেশে আলোচিত হয়েছে। আবার অনেকে তাকে পাগলও বলেছেন। কারণ ফুটবলের প্রতি তার এ ভালোবাসা আসলে অকৃত্রিম।
মাগুরার বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক বারিক আনজাম বারকি বলেন, একজন মানুষের ফুটবলের প্রতি যে এতো তার প্রমাণ আমজাদ ভাই। নিজের জমি বিক্রি করে তিনি যে পতাকা তৈরি করেছেন তা বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা দোয়া করি তার কষ্ট ও চেষ্টা সফল হোক।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস