বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে আবারও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে তার পরিবার। খালেদা জিয়া বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তবে খালেদা জিয়াকে স্থায়ী জামিন দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পরিবারের আবেদন প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেছেন, আইনে তাকে (খালেদা জিয়া) বিদেশ পাঠানোর কোনো সুযোগ নাই। এ প্রসঙ্গে তিনি তুলে ধরেন, যে দুটি শর্তে নির্বাহী আদেশে সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে, তার প্রথমটি হলো তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। আর দ্বিতীয় শর্তটি হলো, তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।
এদিকে, সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য যত দ্রুত সম্ভব তাকে বিদেশে পাঠাতে মেডিকেল বোর্ড আবারও পরামর্শ দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ আবেদন করেন খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার। একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার বলেন, তার (খালেদা জিয়ার) পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে শুনেছি। এর বেশি কিছু জানি না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আবেদনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আবেদন করেছেন। আইনমন্ত্রীর কাছে তা আছে। আইনমন্ত্রী হয়তো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে একটা ব্যবস্থা নেবেন। তিনি আরও বলেন, তার উন্নত চিকিৎসা তো হচ্ছেই। এখন কি বিদেশে চিকিৎসা সম্ভব?
বৃহস্পতিবার বিকালে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় দোয়া মাহফিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া অসুস্থ। তাকে সুচিকিৎসা থেকে সরকার বঞ্চিত করছে। তার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবি আমরা বহুবার করেছি, করছি। কিন্তু সরকার এখন পর্যন্ত সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না। এটা অত্যন্ত অমানবিক।
রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে যান মহাসচিব। সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন তিনি।
এর আগেও চিকিৎসার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছিল। সেসব আবেদন নাকচ হয়। বিএনপি নেত্রীর পরিবারের এক সদস্য বলেন, বরাবরের মতো এবারও তাদের আবেদনে খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ চাওয়া হয়েছে। তাদের বিশ্বাস, মানবিক বিবেচনায় তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে দুটি শর্তে সরকারের নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল ২০২০ সালের ২৫ মার্চ। তখন করোনা মহামারির মধ্যে তার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর থেকে পরিবারের আবেদনে ছয় মাস অন্তর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়।
একটি সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার পরিবার এবারের আবেদনেও শর্ত শিথিল করে তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়েছে। আবেদনে ‘মানবিক’ বিবেচনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও এর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, শর্ত শিথিল করে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়ার সুযোগ নেই।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে প্রায় এক মাস চিকিৎসাধীন রয়েছেন খালেদা জিয়া। তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছেন চিকিৎসকরা। বিএনপির স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই।
মেডিকেল বোর্ড পরামর্শ দিয়েছে, তাকে বিদেশে নিয়ে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি অ্যাডভান্স সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক যুগান্তরকে বলেন, মূলত লিভার সিরোসিস থেকেই তার শারীরিক জটিলতা বাড়ছে। পেটে পানি চলে এসেছে। প্রতিনিয়ত তা অপসারণ করতে হচ্ছে। এ কারণে শরীরে প্রোটিন কমে যাচ্ছে। শরীরে অন্য প্যারামিটারের জটিলতাগুলো বাড়ছে।
৭৮ বছর বয়সি খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, অস্টিও আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এছাড়া তার মেরুদণ্ড, ঘাড়, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে। ২০২১ সালের এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে কয়েকবার নানা অসুস্থতার কারণে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
গত বছরের জুনে বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। চলতি বছরের ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে সময় হাসপাতালে পাঁচ দিন চিকিৎসা শেষে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। সর্বশেষ ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বাংলা৭১নিউজ/এবি