কঠিন সময়ে আবারও প্রকাশ পেল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতার করুণ চিত্র। টানা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা দলটির তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীরা ব্যস্ত ছিল নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দলে। হয়ে পড়েছিল জনবিচ্ছিন্ন। এতদিন পুলিশ ও আমলাদের ওপর নির্ভরশীল আওয়ামী লীগের কী হতশ্রী অবস্থা- এই সংকটে তা স্পষ্ট হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আর মাঠে দাঁড়াতেই পারলেন না দলটির নেতাকর্মীরা। একদিনের ব্যবধানে প্রভাবশালী দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ও এমপি-মন্ত্রীদের প্রায় সবাই চলে গেছেন আত্মগোপনে। এমতাবস্থায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় সারা দেশের দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সারা দেশে তাদের দলীয় কার্যালয়, বাসা-বাড়ি ও অফিসে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হচ্ছে।
সর্বশেষ রোববার ছাত্র-জনতার এক দফার বিপক্ষে মাঠে ছিলেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকমীরা। এদিন ঢাকাসহ সারা দেশে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ঘটে বহু হতাহতের ঘটনাও। দিনশেষে কারফিউ ঘোষণা হলে নিজেদের ঘোষিত সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয় দলটি।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয়ের মূল ফটকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্য ও সংবাদকর্মী এবং একজন দারোয়ান গেটে চেয়ার পেতে বসে আছেন। তখনও দলের কেন্দ্রীয় কিংবা সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা কেউ আসেননি। তালাবদ্ধ ভেতরের অধিকাংশ রুম। দায়িত্বরত ব্যক্তি জানান, চলমান কারফিউ থাকায় দলীয় নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসেননি। এদিন বিকালে এ কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সরেজমিনে একই চিত্র দেখা যায় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও। সেখানেও দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন না। সর্বশেষ রোববার ধানমন্ডি দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় এবং ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। তারা আগেও কারফিউর মধ্যেই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান নিতেন। তবে সোমবার সকাল থেকে নেতাকর্মীশূন্য দেখা গেছে পার্টি অফিসগুলো।
সংকটে আওয়ামী লীগ শক্ত হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে না- আরেকবার তা প্রমাণিত হলো। বিশেষ করে এই সংকটে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভ‚মিকা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেই। সাম্প্রতিক সময়ে দলের কয়েকটি সভায় নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়তে হয় তাকে। একাধিকবার দলীয় কার্যালয়ে তাকে দেখে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেন দলের নেতাকর্মীরা। রোববার তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাওড় হয়েছে, তিনিও দেশ ছেড়ে চলে গেছেন।
আওয়ামী লীগের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাও দিকনির্দেশনাহীন। তারা জানেন না কী করতে হবে।
মন্ত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই হাইব্রিড। তারা এখন নিজেদের বাঁচানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করছেন। অনেক আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় হামলা করা হয়েছে, বাসা-অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মার খাচ্ছেন। এ পরিস্থিতি থেকে আওয়ামী লীগ কীভাবে সামনে এগোবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হিসাবে দেখা দিয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/আরএম