“আমি তোমাকেই বলে দেব, কি যে একা দীর্ঘ রাত, আমি হেঁটে গেছি বিরাণ পথে”- এই দীর্ঘ রাতের পথিক এখন একাই তিনি। ২০০৭ সালে না ফেরার দেশে চলে যান সঞ্জীব চৌধুরী। বাইলেটারেল সেরিব্রাল স্কিমিক স্ট্রোকে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই গুণী সঙ্গীতজ্ঞ। আজ এই গুণী সঙ্গীতজ্ঞের জন্মদিন।
মানুষ হিসেবে সঞ্জীব চৌধুরীর ছিল সম্মোহনী ক্ষমতা, মানুষকে আপন করার নেওয়ার মতো ক্ষমতা। তিনি ভালোবাসতে পারতেন মানুষকে। সকলের সঙ্গে তার ছিল দারুণ সখ্যতা। তিনি যেমন ছিলেন নরম মানুষ, ঠিক ততটাই অত্যাচারীর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর সঞ্জীব হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে মাস্টার্স করে আশির দশকে সাংবাদিকতা শুরু করেন সঞ্জীব চৌধুরী। আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ ও যায়যায়দিনসহ বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় কাজ করেছেন তিনি।
ছাত্রজীবনে ‘শঙ্খচিল’ নামে একটি গানের দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে বাপ্পা মজুমদারের সঙ্গে একত্রিত হয়ে গঠন করেন ভিন্নধর্মী ব্যান্ড দলছুট। স্বপ্নবাজি নামে একটি একক অ্যালবাম মুক্তি পায় তার।
ব্যান্ড ও সলো অ্যালবামে সঞ্জীব চৌধুরীর গাওয়া জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে গাড়ি চলে না, বায়োস্কোপ, আমি তোমাকেই বলে দেবো, কোন মেস্তিরি বানাইয়াছে নাও, আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল চাঁদ, সাদা ময়লা রঙিলা পালে, চোখ, কথা বলবো না প্রভৃতি। শিল্পী হিসেবে যতোটা জনপ্রিয় ছিলেন সঞ্জীব চৌধুরী, তারচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিলেন গীতিকার ও সুরকার হিসেবে।
গানের পাশাপাশি কবিতাও লিখতেন সঞ্জীব চৌধুরী। দেশের প্রায় সব পত্রিকায়ই তার কবিতা ছাপা হয়েছে। তার একমাত্র কাব্যগ্রন্থের নাম রাশপ্রিন্ট। শুধু কবিতা নয়, সঞ্জীব চৌধুরী বেশ কিছু ছোট গল্প ও নাটকের স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। সঞ্জীব চৌধুরী অভিনীত একমাত্র নাটক সুখের লাগিয়া।
আজ জন্মদিনে গায়ককে স্মরণ করে বিশেষ আয়োজন করছে তার সতীর্থ ও ভক্তরা। ‘সঞ্জীব উৎসব’ শিরোনামে এবারের আয়োজনটি একটু ব্যতিক্রমভাবেই করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে ‘সঞ্জীব উৎসব’। রোববার বিকাল ৪টায় শুরু হতে যাওয়া এই গানের এই আয়োজনে থাকবে ১৫ জন একক শিল্পী ও ৩ ব্যান্ডের পরিবেশনা। একক শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন জয় শাহরিয়ার, লিমন, লাবিব কামাল গৌরব, আরমীন মূসা, সন্ধি, সালেকিন, রিয়াদ হাসান, সাহস মোস্তাফিজ, সুহৃদ স্বাগত, অর্ঘ্য, রাফসান, পলাশ ও পিজু। পরিবেশনায় ব্যান্ডের তালিকায় আছে বাংলা ফাইভ, কোলস্লো ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ