বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: আজ দিন পেরিয়ে রাতের আঁধার নামলেই আবির্ভাব ঘটবে এক অলৌকিক অসামান্য মহাপুণ্যে ভরা রজনী। এই রজনী হচ্ছে মহাপবিত্র মহিমান্বিত লাইলাতুল মেরাজ। এ রাতে আমাদের প্রিয় নূর নবীজী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্সালামের সাথে পবিত্র কাবা হতে ভূ-মধ্যসাগরের পূর্বতীর ফিলিস্তিনে অবস্থিত পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস হয়ে সপ্তাকাশের উপর সিদরাতুল মুনতাহা হয়ে সত্তুর হাজার নূরের পর্দা পেরিয়ে আরশে আজিমে মহান আল্লাহ তায়ালার দিদার লাভ করেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি অবলোকন করেন সৃষ্টি জগতের সমস্ত কিছুর অপার রহস্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম-এর জীবনের সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা ‘মেরাজ’।
মেরাজ ইসলামের ইতিহাসে এমনকি পুরো নবুওয়াতের ইতিহাসেও এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। কারণ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্যকোনো নবী এই পরম সৌভাগ্য লাভ করতে পারেননি। এ মেরাজ রজনীতেই মানবজাতির শ্রেষ্ঠ ইবাদত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও যথাযথ মর্যাদায় মুসলিম জাহানের সঙ্গে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও আজ কোরআনখানি, নফল সালাত, জিকির-আজগার, ওয়াজ মাহফিল, দোয়া-দরুদ পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে পবিত্র শবে মেরাজ পালন করবেন।
মেরাজ শব্দটি আরবী, অর্থ ঊর্ধ্বারোহণ। এ মেরাজের বড়দাগে অর্থ দাঁড়ায়-সপ্তম আসমান, সিদরাতুল মুন্তাহা, জান্নাত-জাহান্নাম পরিদর্শন ও ধনুক কিংবা তার চেয়ে কম দূরত্বে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য পর্যন্ত ভ্রমণ। এ ছিল আল্লাহ তাআলার মহান কুদরত, অলৌকিক নিদর্শন, নবুয়তের সত্যতার পক্ষে এক বিরাট আলামত। জ্ঞানীদের জন্য উপদেশ, মোমিনদের জন্য প্রমাণ, হেদায়েত, নেয়ামত, রহমত, মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্যে হাজির হওয়া, ঊর্ধ্বলোক সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন, অদৃশ্য ভাগ্য সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান লাভ, ইহকাল ও পরকাল সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন, স্বচক্ষে জান্নাত-জাহান্নাম অবলোকন, নভোমন্ডল পরিভ্রমণ এবং সর্বোপরি এটিকে একটি অনন্য মুজিযা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা।
পারিভাষিক অর্থে নবুয়তের একাদশ সালের ২৭ রজব রাতের শেষ প্রহরে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম জিব্রাঈলের (আ.) সাথে আল্লাহর নির্দেশে বায়তুল্লাহ হতে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ‘বোরাকে’ ভ্রমণ, অতঃপর সেখান থেকে অলৌকিক সিঁড়ির মাধ্যমে সপ্ত আসমান পেরিয়ে আরশে আজিমে আল্লাহর সান্নিধ্য ভ্রমন শেষে পুনরায় বায়তুল মুকাদ্দাস হয়ে প্রভাতের আগেই মক্কার নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তনের ঘটনাকে ‘মেরাজ’ বলা হয়।
মেরাজ সম্পর্কে আল্লাহ পবিত্র কুরআন শরীফে বলেন-“পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি তাঁর পরম প্রিয় বন্ধুকে রাতের বেলায় মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করালেন।
এই রাত্রিতে উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রতি ৫ ওয়াক্তের নামাজ ফরজ হয়। ফলে এটা খুবই ফজিলতের রাত্রি। অতএব এই রাত্রিতে যতদূর সম্ভব জেগে নফল নামাজ, জিকির-আজগার, কুরআন তিলওয়াত ও দরুদ শরীফ ইত্যাদি পাঠ করা এবং নফল নিয়তে দিবাভাগে রোজা রাখা উত্তম।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইস