চলতি মৌসুমে টানা ১৪ দিন চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। গতকাল রোববার (১৬ এপ্রিল) চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে যৌথভাবে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একদিনের ব্যবধানে আবারও তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে চুয়াডাঙ্গায়।
সোমবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে শনিবার (১৫ এপ্রিল) চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আরও কয়েকদিন তাপদাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক জামিনুর রহমান।
এদিকে তীব্র তাপদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। বেশি কষ্ট পাচ্ছে শিশুরা।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের চুয়াডাঙ্গা দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ঘোষ বলেন, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম। এ কারণেই ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে।
অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও জেলা তথ্য অফিসের পক্ষ থেকে অতি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পর্যাপ্ত পানি পান করতে বলা হচ্ছে। লেবুর শরবত ও স্যালাইন খাওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া হিট স্ট্রোক ও ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান। বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পিচ গলে যেতে দেখা গেছে। তবে এতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে না বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস।
জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় অস্বাভাবিক তাপদাহ বিরাজ করছে। প্রতিদিনই সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড গড়ছে। তীব্র গরমে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। দিনে বাসায় থাকা দায় হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাতে মশার যন্ত্রণা। গরমে সঙ্গে ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়ায় সারারাতই নির্ঘুম কাটাতে হচ্ছে।
আতাউল হক নামে এক যুবক বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে দিনে বাড়িতে না থেকেও এদিক-সেদিক ঘোরা যায়। কিন্তু রাতে তো ঠিকই ঘরে যেতে হয়। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে তখন ঘরে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। বাড়িতে শিশুরা গরমে অস্থির হয়ে পড়ছে।
আবিদ জোয়ার্দ্দার নামে এক স্কুলছাত্র , দিনে তো ফ্যানের বাতাস গায়েই লাগছে না। বাইরে বের হলে মনে হচ্ছে গরম বাতাসে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। তার ওপর লোডশেডিংয়ে এ দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক জামিনুর রহমান বলেন, টানা ১৪ দিন চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যার পর সারাদেশের আপডেট জানা যাবে। ঈদের আগে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শহর, গ্রাম-গঞ্জে সব স্থানে মাইকিং করে জনসাধারণকে সতর্ক করা হচ্ছে। তারা যেন অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাহির না হয়। রোজাদারদের সন্ধার পর শরবত, পানি ও ফলমূল বেশি বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ