বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: আওয়ামী লীগের আসন্ন জাতীয় সম্মেলন হবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অনন্য মাইলফলক। ঐতিহ্য ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে নবীন-প্রবীণদের সংমিশ্রণে দলটির আগামীর নেতৃত্ব সাজানো হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে টার্গেট করেই মূলতঃ ঢেলে সাজানোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে দলের জাতীয় সম্মেলনে দেশ ও দলের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরার প্রয়াস থাকবে।
উৎসবপূর্ণ সম্মেলনকে ঘিরে সমগ্র নগরী থাকবে ব্যাপক নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদ মোকাবেলা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে বেশ কিছু ঘোষণা আসতে পারে বলেও সূত্রে জানা গেছে। ‘উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’ এই শ্লোাগানকে সামনে রেখে দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ তার ২০তম জাতীয় সম্মেলন করতে যাচ্ছে।
পরপর তিনবার সম্মেলনের তারিখ পিছিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর বহুল আলোচিত ও প্রতীক্ষিত এ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে। ক্ষমতাসীন এ দলটির জাতীয় সম্মেলনে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বিদেশী মেহমানের যোগদান নিশ্চিত করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ দলের জাতীয় সম্মেলন নিয়ে বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবারের সম্মেলন হবে ভিন্ন ধাঁচের। দলের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি থাকবে নানা চমক। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী সম্মেলনের মূল টার্গেট দলকে সর্বাত্মক গোছানো। বিরোধীদল মোকাবিলায় রাজপথের সাহসী নেতাদের সামনে নিয়ে আসা।
সম্মেলনে যে নতুন কমিটি হবে, নতুন যে নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে; সেই নেতাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোকে মোকাবিলা করাসহ চলমান পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে, এমনটি মাথায় রেখেই সম্মেলনে বড় ধরনের চমক দিতে চান দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব বিষয় মাথায় রেখেই দলীয় পদ-পদবিতে উল্লেখযোগ্য রদবদলের সম্ভাবনা না থাকলেও বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে দলটিতে। দলের জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে মূল্যায়ন বিবেচনায় কেন্দ্রীয় নেতাদের আমলনামা এখন সভাপতির টেবিলে। তিনি দলের নেতাদের বিগত দিনের কর্মকান্ড চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন।
সূত্র জানায়, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামই আগামী কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন। তবে কিছু নেতাকর্মী এ পদে নতুন কাউকে দেখতে চান। এ পদের জন্য আলোচনায় আছেন দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহম্মদ নাসিম ও ওবায়দুল কাদের। কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুর রাজ্জাকও রয়েছেন আলোচনায়। নেতাকর্মীদের আলোচনা-গুঞ্জন যাই থাক মূলত দলের সর্বোচ্চ এ সাংগঠনিক পদটি দলীয় সভানেত্রীর একান্ত ইচ্ছা ও মর্জির উপরই নির্ভর করছে বলেও নেতাকর্মীরা জানান।
জানা গেছে, অত্যন্ত জাঁকজমক ও চমকের মাধ্যমে দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলন সফল করার উদ্যোগ নিয়েছে দেশের প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। এবারের জাতীয় কাউন্সিলে দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের পরিবর্তন, কেন্দ্রীয় কমিটির আকার বৃদ্ধি আর নতুন পদ সৃষ্টিসহ সম্ভাব্য বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে। কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন দলের নেতাকর্মীরা। গুরুত্বপূর্ণ পদে কোনো পরিবর্তন আসছে কিনা তা নিয়ে নেতারা মুখ না খুললেও কর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।
তবে নেতারা বলছেন সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণভাবে এবং উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে উৎসবের আমেজে অনুষ্ঠিত হবে এবারের সম্মেলন। তিন দফা পিছিয়ে উপমহাদেশের প্রাচীন দল আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর। ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ক্ষমতাসীন দলটির। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২০১৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সম্মেলনের তারিখ ২৮ মার্চ নির্ধারণ করে কমিটির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়। এরপর আরও দু’বার পেছানো হয় সম্মেলনের তারিখ।
সম্প্রতি দলের সভানেত্রীর সঙ্গে সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির বৈঠকে পুনরায় দিন ঠিক করা হয়। নেতারা জানান, উৎসবমুখর পরিবেশে সম্মেলনের সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুতি অনেকটাই এগিয়ে গেছে। এবারের সম্মেলনে দলের গঠনতন্ত্র যুগোপযোগী করার পাশাপাশি দলীয় কাঠামোতে বেশ কিছু পরিবর্তনও আসতে পারে বলে জানান দলটির নেতারা। সম্মেলনে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা ও ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে বেশ কিছু ঘোষণা আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন নেতারা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, গঠনতন্ত্রে কিছু পরিবর্তন আসবে। এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় হতো। তাই গঠনতন্ত্রে এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ ছিল না। এবার এ বিষয়টি যোগ হবে। পাশাপাশি কমিটির আকারে কিছুটা পরিবর্তন আসবে। তিনি বলেন, আগামী দিনের আওয়ামী লীগের লক্ষ্যকে সামনে রেখে পার্টির কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক সংগঠন এখানে যোগ্যতা-দক্ষতার মূল্যায়ন হয়। নিষ্ঠার সঙ্গে যার যার দায়িত্ব পালন করলে অবশ্যই পদোন্নতি হবে। আবার দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে বাদ পড়তে হবে।
এবার আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের শ্লোগান হচ্ছে ১২ শব্দের ‘উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার। এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার। দেশের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব গড়তে আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক চর্চায় বিশ্বাসী উল্লেখ করে এবারের কাউন্সিলেও তারই প্রতিফলন ঘটবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন দলের নেতারা। দলীয় সূত্র জানায়, এবার নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে কমিটি করতে চায় দলটি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভবনা কম থাকলেও এবারের সম্মেলনে প্রায় এক ডজন নতুন মুখ আসতে পারে। সেই সঙ্গে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রাধান্য পাবে নারী নেতৃত্বও।
দলটির নীতি নির্ধারণী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনটি সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় সদস্য ও ৩৩ শতাংশ নারী কোটা পূরণ করতে প্রায় এক ডজন পদে আসতে পারে নতুন মুখ। নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলটির ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা, তরুণ ও ত্যাগীদের প্রাধান্য দেয়া হবে। দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্র অনুযায়ী ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে আগামী সম্মেলনে বেশ কিছু নতুন মুখ উঠে আসতে পারে। আর সেক্ষেত্রে অতীতে দলের জন্য অবদান রাখা নারী নেত্রীদের মূল্যায়ন করার কথা ভাবছে দলটির নেতারা।
তবে আগামী কার্যনির্বাহী কমিটিতে পদোন্নতি পাচ্ছেন বর্তমান কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাহিদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মণি, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাসিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস, বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী, যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, মির্জা আজম, সিমিন হোসেন রিমি, এনামুল হক শামীম, সুজিত রায় নন্দি, এসএম কামাল ও আমিনুল ইসলাম আমিন।
সম্মেলনের মাধ্যমে বাড়ছে কার্যনির্বাহী সদস্য পদেরও সংখ্যা। আসছে নতুন তারুণ্যের মুখ। কয়েকজন সংসদ সদস্য। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান হুইপ ইকবালুর রহিম, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, সংসদ সদস্য নাঈম রাজ্জাক, জাহিদ আহসান রাসেল, আব্দুল ওয়াদুদ দারা, ইস্রাফিল আলম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শফি আহমেদ, মাঈনুদ্দীন হাসান চৌধুরী, লিয়াকত সিকদার, মাহবুবুল হক শাকিল, সাইফুজ্জামান শেখর, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, মিহির কান্তি ঘোষাল, মনিরুজ্জামান মনির, পঙ্কজ সাহা, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, বদিউজ্জামান সোহাগ, যুব মহিলা লীগের যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, মেহের আফরোজ চুমকি, সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি, শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রায় রমেশ চন্দ্র, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে সদস্য পদে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভিশন-২০৪১ এর আলোকেই নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী ইশতেহার জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এখনই নির্বাচনী ইশতেহারের কাজ এগিয়ে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। আর এজন্য বেছে নেয়া হয়েছে দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলনকে। সম্মেলনেই তুলে ধরা হবে রূপকল্প ২০৪১ শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ সুখী ও উন্নত জনপদ। এর ভিত্তিতেই চূড়ান্ত হবে ইশতেহার। আসন্ন জাতীয় সম্মেলনে রাষ্ট্র পরিচালনায় সাত বছরের সালতামামি তুলে ধরবে আওয়ামী লীগ। অর্জন-ব্যর্থতার পাশাপাশি শুধরে নেয়ার লক্ষ্যে তুলে ধরা হবে ভুলগুলোও। এ অভিপ্রায়েই তৈরি হচ্ছে ভিশন-২০৪১। শুধু স্বপ্ন নয়, বাস্তবায়নের রূপরেখাও থাকছে ঘোষণাপত্রে। ২০২১ সালের মধ্যেই মধ্যম আয়ে দেশের কাতারে শামিল হচ্ছে বাংলাদেশ। উন্নয়নের অগ্রগতি ধরে রাখতে রাষ্ট্র পরিচালনার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা কাউন্সিলের মধ্য দিয়েই জাতি সামনে তুলে ধরবে ক্ষমতাসীন দল।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ-উল আলম লেলিন বলেন, কাউন্সিল যে রূপরেখাটি প্রণয়ন করবে বা যে ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করবে সেই ঘোষণাপত্রটিই হবে আগামী নির্বাচনের নির্বাচনি ইশতেহারের ভিত্তি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে দিন বদলের সনদ, শ্লোগান নিয়ে ঘোষণা হয়েছিলো ভিশন-২০২১। আর তা এসেছিলো দলের ১৯তম সম্মেলনের ঘোষণাপত্র থেকে। এবারও ভিশন-২০৪১ থেকেই আসছে আগামী নির্বাচনের শ্লোগান।
এবার ৩৩ শতাংশ নারী কোটায় আসতে পারে নতুন মুখ। তিনটি সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় সদস্য ও ৩৩ শতাংশ নারী কোটা পূরণ করতে প্রায় এক ডজন পদে আসতে পারে নতুন মুখ। নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলটির ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা, তরুণ ও ত্যাগীদের প্রাধান্য দেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আওয়ামী লীগের বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৭টি সাংগঠনিক সম্পাদক পদ রয়েছে। তবে ২০তম জাতীয় সম্মেলনে সাংগঠনিক সম্পাদক ১০ করার প্রস্তাব দেয়া হবে।
গঠনতন্ত্রের প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী আগামী সম্মেলনে ময়মনসিংহ বিভাগে একজন সাংগঠনিক সম্পাদক পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। ফরিদপুর ও কুমিল্লা পৃথক দুটি নতুন বিভাগে গঠন করার আলোচনা রয়েছে সরকারের মধ্যে। বিভাগ দুটি গঠন করা হলে আরও দুটি সাংগঠনিক সম্পাদক পদ সৃষ্টি হবে। আগামী সম্মেলনের গঠনতন্ত্র সংক্রান্ত সংশোধনীতে এমনটা উল্লেখ থাকবে বলেও জানিয়েছে দলটির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা।
বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে সাবেক ছাত্রনেতা শাহে আলম, ইসহাক আলী খান পান্না, পংকজ দেবনাথ ও খলিলুর রহমান খলিলের নাম শোনা যাচ্ছে। খুলনা বিভাগে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নতুন মুখের মধ্যে আলোচনায় আছেন বর্তমান কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এসএম কামাল হোসেন, বীরেন শিকদার, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সাইফুজ্জামান শিখর ও আব্দুল মজিদ। চট্টগ্রাম বিভাগে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আতাউর রহমান কায়সার পরিবারের একজন, মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, শাহজাদা মহিউদ্দিন, সীমান্ত তালুকদারের নাম আলোচনায় আছে। রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় রয়েছে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ইসরাফিল আলম, হাসান কবির আরিফ, কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি ও উমা চৌধুরী। রংপুর বিভাগে মাহবুবা আরা বেগম গিনি, রাকেশ রহমান, মাহমুদ হাসান রিপন, নুরুল ইসলাম সুজন। ময়মনসিংহ বিভাগে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহবুব হক শাকিল, ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট আবদুল মতিন ও মারুফা আক্তার পপি।
নতুন বিভাগ হলে আসতে পারে নতুন মুখ নতুন বিভাগ হলে ফরিদপুর বিভাগ থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতিতে নতুন মুখ উঠে আসতে পারে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বাহালুল মজনুন চুন্নু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাউসার, ইকবাল হোসেন অপু, বাহাদুর বেপারি, নাহিম রাজ্জাক, আনোয়ার হোসেন ও শাহাবউদ্দিন ফরাজী। কুমিল্লা বিভাগের আলোচনায় আছেন জহির উদ্দিন মোহাম্মদ লিপ্টন, শিক্ষক নেতা শাহজাহান আলম সাজু। ঢাকা বিভাগের দায়িত্বে আসতে পারেন ঢাকা মহানগরের কোনো তরুণ সংসদ সদস্য। অন্য কোন বিভাগের কাউকেও দেয়া হতে পারে ঢাকার দায়িত্ব।
তবে এ বিভাগে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর নাম বেশ আলোচনায় রয়েছে। কার্যনির্বাহী পদে আলোচনায় আছেন জাহিদ আহসান রাসেল ও মনিরুজ্জামান মনির। দলটির নীতি নির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্র অনুযায়ী ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে আগামী সম্মেলনে বেশ কিছু নতুন মুখ উঠে আসতে পারে। আর সেক্ষেত্রে অতীতে দলের জন্য অবদান রাখা নারী নেত্রীদের মূল্যায়ন করার কথা ভাবছে দলটির নেতারা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেত্রী হিসেবে যুক্ত হতে পারে এমন আলোচনায় রয়েছেন দলটির মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রওশন জাহান সাথী, সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, মেহের আফরোজ চুমকি, তারানা হালিম, নুরজাহান বেগম মুক্তা, ওয়াসিকা আয়শা খান, উমা চৌধুরী, নাজমা আক্তার ও আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী প্রমুখ।
সহসম্পাদক নিয়োগ দেখভাল করবেন শেখ হাসিনা নানা সমালোচনার মুখে আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক নিয়োগে এবার কড়াকড়ি হচ্ছে। আগামী সম্মেলনে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সহসম্পাদক নিয়োগ এবং তাদের কর্মকা- নির্ধারিত করে দেয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজেই এবার দেখভাল করবেন। সূত্র জানায়, খেয়াল খুশিমতো, ঢালাওভাবে এত সহসম্পাদক নিয়োগের বিষয়ে দলীয় নেতাদের সামনে ও বিভিন্ন ফোরামে একাধিকবার উষ্মা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এত সহসম্পাদক নিয়োগের কারণ হিসেবে, দায়িত্বপ্রাপ্তরা তখন বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনকে কারণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সামনে উত্থাপন করেছিলেন। তবে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেই এমন যুক্তির সমালোচনা রয়েছে বিস্তর। এজন্য আওয়ামী লীগের আসন্ন ২০তম সম্মেলনে সহসম্পাদক নিয়োগের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজে দেখবেন বলে সিনিয়র নেতা ও ঘনিষ্ঠদের তিনি জানিয়েছেন। উৎসবে সাজবে ঢাকা সূত্র জানায়, এবারের সম্মেলন হবে দারুণ জমকালো।
সম্মেলন প্রস্তুতির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, কাউন্সিলের কমপক্ষে ১০/১৫ দিন আগে থেকে রাজধানীতে সম্মেলনের বহিঃপ্রকাশ দেখা যাবে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ ফ্লাইওভার প্রবেশদ্বারে আলোকসজ্জা করা হবে। বড় বড় এলইডি স্ক্রিনে দেখানো হবে দলটির ইতিহাস-ঐতিহ্য, অর্জন ও উন্নয়নের চিত্র। এরই মধ্যে সেসব ডকুমেন্টারির নির্মাণকাজ শুরু হয়ে গেছে।
অভ্যর্থনা উপ-কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বিদেশি অতিথিদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি, ভারতের জাতীয় কংগ্রেস, ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি, যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান, যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ ও লেবার পার্টি এবং বিশ্বের আরও কিছু ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। চীনের ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও ভারতের কংগ্রেস এবং ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতৃবৃন্দ সম্মেলনে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। ‘স্যান্ড আর্ট’-এর মাধ্যমে দেখানো ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ডের দৃশ্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে ‘স্যান্ড আর্ট’ (বালির শিল্পকর্ম) এর মাধ্যমে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকা-ের চিত্র তুলে ধরা হবে।
সেখানে থাকবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্ট কালরাতে হত্যাকা-ের শিকার সবার প্রতিকৃতি। কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপপরিষদ এমন পরিকল্পনাই করেছে বলে জানিয়েছেন উপকমিটির সদস্য সচিব মির্জা আজম। মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপ-কমিটির আহ্বায়ক এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাকে উৎসবের নগরীতে পরিণত করা হবে। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী, সরকার ও দলের অর্জনও দেশবাসীকে জানানো হবে।
সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সব সময় নতুনরা নেতৃত্বে আসেন, বিদায় নেন পুরনোরা। আগামী নির্বাচন এবং ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্য রেখে তরুণ দক্ষ ও যোগ্য নেতাদের কমিটিতে স্থান দেয়া হবে। প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালে ঢাকার রোজ গার্ডেনে জন্ম আওয়ামী লীগের। সে হিসেবে সংগঠনটি পেরিয়েছে ৬৭ বছর। নেতারা জানান, তরুণ বঙ্গবন্ধু ১৯৫২ সালে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। এর পর থেকে সব সময়ই নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে এগিয়ে চলেছে আওয়ামী লীগ।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি