এবারের আইপিএলের চেহারাটা যেন কেমন! বিশাল বিশাল স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে খাঁ খাঁ শূন্যতা! অথচ আইপিএলের আগের আসরগুলোতেই ছিল এবারের বিপরীত চিত্র। দিনে খেলা হোক কিংবা রাতে, গ্যালারিগুলো ঠাসা থাকত দর্শকে। ম্যাচের আগেই টিকিট নিয়ে চলত হাহাকার। কিন্তু এবার? সেধে, হাতে টিকিট ধরিয়ে দিয়েও নাকি দর্শকদের মাঠমুখী করানো যাচ্ছে না। হঠাৎ কী হলো আকর্ষণে বুঁদ এই টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতার! ভারতীয়রা কি তবে ধীরে ধীরে আগ্রহ হারাতে শুরু করেছে এই প্রতিযোগিতার ব্যাপারে! নাকি অন্য কিছু!
আইপিএলের আয়োজক ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বড় বড় কর্তার কপালেও ভাঁজ—এমন তো হওয়ার কথা নয়! টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট তো এমনিতেই জনপ্রিয়! তার ওপর সেই ২০০৮ সাল থেকে আইপিএলের প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিই ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছে সমর্থন-ভিত্তি। নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে! কেউ কেউ সান্ত্বনা খুঁজছেন আবহাওয়ার উত্তাপে। মহারাষ্ট্র-হায়দরাবাদ থেকে শুরু করে ভারতের অনেক আইপিএল আয়োজক রাজ্যেই চলছে তীব্র গরমের সঙ্গে জনমানুষের লুকোচুরি। আবার খরায় ফেটে চৌচির এই রাজ্যগুলোর জমি। এমন দুর্ভোগক্লিষ্ট সময়ে টিকিট কেটে আইপিএল-বিনোদন উপভোগে বাধছে অনেকেরই।
কিন্তু টেলিভিশন সম্প্রচার কর্তৃপক্ষও যে অন্য ধরনের কথা বলছে! যে আইপিএলের সম্প্রচার স্বত্ব পেতে তাবৎ সম্প্রচার সংস্থার মধ্যে কাড়াকাড়ি, সেই আইপিএলেরই ‘টিআরপি’ কম! ভাবা যায়!
ভারতের বিভিন্ন পত্রপত্রিকাতেও এই ব্যাপার নিয়ে উদ্বেগ ধরা পড়ছে। পত্রিকাগুলোতে এমন অভিযোগও উঠেছে, টেলিভিশন চোখ রেখে আসলে আইপিএলের এবারের আসরের সঠিক হালচাল-চিত্র বোঝা সম্ভব নয়। সম্প্রচার সংস্থা নিজেদের স্বার্থেই খেলা সম্প্রচারের সময় টেলিভিশন ক্যামেরা এমন জায়গায় ধরছে, যেখানে মানুষের মোটামুটি ভিড় দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মাঠে যাঁরা প্রতিযোগিতাটির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন বিভিন্ন দায়িত্বে, তাঁরা কিন্তু ঠিকই বুঝতে পারছেন, আইপিএলের ‘অমৃতে অরুচি’ ধরেছে দর্শকদের। গ্যালারি এখনো মোটামুটি বেশ ভরাই। তবে দর্শক–আগ্রহে চোখে পড়ার মতো ঘাটতিও লক্ষ করা যাচ্ছে এবারের আসর ঘিরে।
পাঞ্জাব ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কারণেই আইপিএলের এই অবস্থা। সবে তো দর্শকেরা একই মাঠে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দেখেছে। একটু সময় লাগবে। কেউ কেউ আবার বলছেন, টিকিটের দাম বেশি হওয়ায় মানুষ আগ্রহ হারিয়েছে। কিন্তু আসল ব্যাপারটা যে কী, নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না কেউই।
ভারতের পত্রপত্রিকাগুলো লিখেছে, টি-টোয়েন্টির অর্থ রোজগারের গরুটাকে কি একটু বেশিই দুইয়ে ফেলেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড! ২০০৮ সাল থেকে প্রতিবছরের আয়োজন, একই দল, একই ফরম্যাট। পৃষ্ঠপোষকদের খেয়ে না–খেয়ে লড়াই, ক্রিকেটের চেয়ে বাণিজ্যের ব্যাপারটায় প্রচ্ছন্ন গুরুত্ব থেকে শুরু করে ম্যাচ ফিক্সিং, স্পট ফিক্সিং-সংক্রান্ত ইস্যুগুলোও দর্শকদের মনে বিরূপ প্রভাব তৈরি করেছে, বিভিন্ন নেতিবাচক প্রচারণাও আইপিএলের ব্যাপারে আগ্রহটাকে সীমিত করে তুলেছে।
আইপিএলে দর্শক–আগ্রহের কমতির বিষয়ে কোনো কোনো পত্রিকা লিখেছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অতিরিক্ত ব্যবহারের কথা। ২০১১ বিশ্বকাপের পরপরই অনুষ্ঠিত আইপিএলে দর্শক–আগ্রহ ছিল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সেরা।
ভারত ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের পর সেবার মানুষ প্রচণ্ড আগ্রহী হয়েছিল ছোট ফরম্যাটে ভারতীয় ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স দেখার জন্য। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারত অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিলেও মানুষ কিন্তু আইপিএল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অনেক আগে থেকেই একের পর এক টি-টোয়েন্টি খেলে চলছে ভারত। অস্ট্রেলিয়ার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ, বাংলাদেশের এশিয়া কাপ। এরপর বিশ্বকাপ—এত এত খেলা দেখে দেখে ক্লান্ত মানুষের চোখ। বিরিয়ানিও তো রোজ দুই বেলা খাওয়া যায় না! এই প্রসঙ্গে এমন কথা আবারও উঠল, অতিরিক্ত ‘বিরিয়ানি’ কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো নয়।
তবে এখনই এ ব্যাপারে উপসংহার টানতে নারাজ সবাই। আইপিএল শেষ না হওয়া পর্যন্ত দর্শক–আগ্রহ নিয়ে চূড়ান্ত কিছু বলা ঠিকও হবে না। অনেক সময় দেখা যায়, যেকোনো প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগোতে থাকার সময় দর্শকদের আগ্রহও বেড়ে যেতে থাকে।