টাঙ্গাইল সদরের চরপৌলিতে যমুনায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ৩৫ পরিবারের সবাই শেষ সম্বল হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে আরও বেশ কিছু এলাকা। অসময়ে নদী ভাঙনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙনরোধে জরুরি বরাদ্দের জন্য ঢাকায় আবেদন করা হয়েছে। যদিও স্থানীয় সংসদ সদস্য বলছেন, এখানে আড়াই শ কোটি টাকা ব্যয়ে পৌলী এলাকায় চায়না বাঁধের মতো বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, নাগরপুর থেকে সদর উপজেলার চরপৌলী পর্যন্ত জিও ব্যাগ ফেলে যমুনার তীরে বাঁধ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে, কালিহাতীর পাথরঘাট থেকে আলীপুর পর্যন্ত ব্লক ফেলে যমুনার তীরে বেড়ীবাঁধ করা হলেও মাঝখানে ১৬২৫ মিটার বাঁধ না থাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, মঙ্গলবার (৪ জুন) আকস্মিক বাধের বাইরে ভাঙন শুরু হয়। এতে সবার ঘরবাড়িসহ গাছ পালা আসবাব পত্র যমুনায় মুহূর্তেই বিলীন হয়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত যুবক তাঁত শ্রমিক আব্দুল কাদের জিলানি বলেন, তিন দশকে চার বার বাবা-দাদার ভিটে হারিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে আকস্মিক ভাঙনে আমাদের ৬০ শতাংশ বাড়ি যমুনায় বিলীন হয়ে যায়। সহায় সম্বল হারিয়ে রাক্ষুসে যমুনার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। আবাসস্থল ছাড়া সন্তানদের কোথায় রাখবো সেটা নিয়ে চিন্তায় আছি।
চরপৌলির লালবানু বেগম বলেন, যমুনার ভাঙনে বাড়িঘরের আসবাবপত্র এখান থেকে সেখানে টেনে নিচ্ছি। মঙ্গলবার ভাঙনের পর দুই দিন ধরে এগুলো করে যাচ্ছে। এতে রান্না করতে না পারায় ঠিকমত খাওয়াও হয়নি। খেতে না পেয়ে ছোট ছোট নাতি-নাতনিরা কান্না করছে।
একই এলাকার হুনুফা বেগম বলেন, চোখের সামনেই ঘরের টিন, চেয়ার-টেবিল ও গাছগুলো যমুনায় চলে গেলো। কিছুই রক্ষা করতে পারলাম না। আমরা খাবার ও টাকা চাই না। আমরা বাঁধ চাই।
সামাজিক সেবা সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা বেলাল হোসেন বলেন, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ভাঙন কবলিত এলাকার ঘর বাড়ি উদ্ধারে সহযোগিতা করি। মঙ্গলবার চোখের পলকে কয়েকটি ঘর চলে গেলো, তা রক্ষা করতে পারিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ৩০ বছর ধরে কাকুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে যমুনার ভাঙন দেখা যায়। ইতিমধ্যে প্রায় দেড় কিলোমিটার চরপৌলি গ্রাম যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়েছে। গত মঙ্গলবারের ভাঙনে ৩৫ পরিবারের প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাকি বাঁধের কাজ শেষ করার জোর দাবি জানাই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় জিও ব্যাগ ফেলে যমুনার তীরে বাঁধের কাজ করা হয়েছে। সদরের চরপৌলী, কালিহাতীর ভৈরববাড়ী ও আলীপুর এলাকার বাকি ১৬২৫ মিটার বাঁধের কাজের জন্য নতুন প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে। আগামী শুকনো মৌসুমে এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় আড়াই শ কোটি টাকা ব্যয়ে পৌলী এলাকায় চায়না বাঁধের মতো বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ