বাংলা৭১নিউজ,কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজারের অর্ধলক্ষাধিক জেলে এবার ঈদ করছেন সাগরে। কিন্তু মাছের আশায় সাগরে ঈদ কাটিয়েও তাদের ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। ৬৫ দিনের সরকারী নিষেধাজ্ঞাসহ দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গত প্রায় ৩ মাস সাগরে মাছধরা বন্ধ থাকায় আর্থিক অনটনের শিকার জেলেরা অনুকুল আবহাওয়ায় ঈদের আগে সাগরে মাছ ধরতেগিয়েছিলেন।
সোমবার কক্সবাজারের প্রায় আড়াই হাজার বোটের অর্ধলক্ষাধিক জেলে সাগরেই ঈদ করেন। কিন্তু ঈদের পরদিন থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে সাগর ফের উত্তাল হয়ে ওঠলে জেলেরা মাছধরা বন্ধ করে ঘাটে ফিরে আসেন।
আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে আশংকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমূদ্র বন্দরসমূহে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ জানান, ঈদের পরদিন মঙ্গলবার থেকে সাগর ফের উত্তাল হয়ে ওঠলে এবং আবহাওয়া বিভাগ ৩ নং সতর্কতা সংকেত জারি করলে জেলেরা মাছধরা বন্ধ করে ঘাটে ফিরতে শুরু করে। আজ বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যেই কক্সবাজারের প্রায় সকল বোট ঘাটে ফিরে আসে।
বোট মালিকরা জানান, সাগরে মাছধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত প্রায় পক্ষকাল আগে ফের মাছ ধরা শুরু হলেও দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বার বার হোঁচট খাচ্ছে গভীর সাগর থেকে মাছ আহরণকারী ইলিশ জালের বোটগুলো। ফলে নিষেধাজ্ঞার আগে থেকে গত প্রায় ৩ মাসে সাগর থেকে আসেনি কোন ইলিশ। তবে গত ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার থেকে সামুদ্রিক আবহাওয়ার অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে আসায় ঈদের আনন্দকে পরোয়া না করেই গত শুক্রবার থেকে শত শত মাছ ধরার বোট সাগরে রওয়ানা দেয়। এসব বোটের জেলেরা গত সোমবার বঙ্গোপসাগরেই ঈদ করেছেন বলে জানান কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ।
তিনি বলেন, কক্সবাজারের পাঁচ সহস্রাধিক বোটের লক্ষাধিক জেলের মধ্যে অধিকাংশই জেলেই সোমবার সাগরে ঈদ করেছেন। গভীর সাগরেই তারা পাশাপাশি বোট রেখে সকালে ঈদের জামাত করেছেন। কিন্তু ঈদের পরদিন সাগর ফের উত্তাল হয়ে ওঠলে মাছধরা বন্ধ করে জেলেদের ঘাটে ফিরতে হয়।
বোট মালিক ও জেলেরা দু:খ করে বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৪ জুলাই থেকে ফের মাছ ধরা শুরু হলে কক্সবাজারের জেলেরা ইলিশ ধরতে পক্ষকালের রসদ নিয়ে সাগরে রওয়ানা দেয়। কিন্তু গভীর সাগরে পৌঁছে জাল ফেলার আগেই দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মাছ না ধরেই ফিরে আসতে হয়। এর কয়েকদিন পর সাগর শান্ত হলে এ মাসের গোড়ার দিকে ফের সাগরে রওয়ানা দেয় জেলেরা।
কিন্তু বার বার আগ্রহভরে সাগরে গিয়েও দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে তারা বারংবার হোঁচট খায় গভীর সাগর থেকে মাছ আহরণকারী ইলিশ জালের জেলেরা। ফলে নিষেধাজ্ঞার আগে থেকে গত প্রায় ৩ মাসে সাগর থেকে একটি ইলিশও ধরতে না পারায় লক্ষাধিক জেলে চরম আর্থিক অনটনে পড়ে। এমনই অবস্থায় ঈদের কয়েকদিন আগে জেলেরা ফের সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে আবারও খালি হাতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়।
ফিশারীঘাটস্থ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী বলেন, মাছের অভাবে সাগরপাড়ের এ শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাট গত প্রায় ৩ মাস ধরে খা খা প্রান্তরে পরিণত হয়েছে। তবে বুধবার ফিরে আসা কিছু বোটে অতি সামান্য কিছু মাছ পাওয়া গেছে, যা স্থানীয় জেলে ও ব্যবসায়ীরাই ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন।
জেলেরা জানান, সাগরে মাছধরা বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। নৌকাগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর বঙ্গোপসাগরে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে।
ইলিশ জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। বিহিন্দি জালের বোটগুলো সাগর উপকূলে ছোট প্রজাতির মাছ ধরে যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়। কিন্তু বিরূপ আবহাওয়ার কারণে গত ২দিন ধরে সাগরে সকল প্রকার মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এমআরই