ভোলায় বিভিন্ন নদ–নদীতে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অবাধে জাটকা শিকার চলছে। এ ছাড়া জাটকা সংরক্ষণ মৌসুমে বেকার হওয়া সব জেলের জন্য এবার চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। যাঁদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে, তাঁরাও এখন পর্যন্ত চাল পাননি।
জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানায়, মৎস্য অধিদপ্তর জাটকাকে বড় ইলিশ করার জন্য নভেম্বর-জুন এই আট মাস জাটকা সংরক্ষণ মৌসুম হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে মার্চ-এপ্রিল অভয়াশ্রম সময়। এ সময় সব ধরনের মাছ শিকার নিষিদ্ধ। এ সময় নদীতে জাল পাতা, মাছ কেনাবেচা, বহন ও মজুত পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
সাত-আটজন জেলে জানান, সরকারি সহায়তা না পেয়ে পেটের ক্ষুধায় মোট জেলের ৫০-৬০ শতাংশ এবার মাছ ধরছেন। পয়লা বৈশাখের আগে জাটকা শিকারের এ মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। রাতের আঁধারে অবৈধ জালে মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে প্রতিদিন জাটকা ধরা হচ্ছে। এসব মাছ রাতে লঞ্চ, ট্রলার, বাস, ট্রাকযোগে ঢাকা, বরিশাল ও চাঁদপুরের মোকামে যাচ্ছে।
তিন-চারজন আড়তদার বলেন, পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে রমরমা ব্যবসা করতে ঢাকা, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুরের আড়তদারেরা জাটকা মজুত করছেন। এসব জাটকা ভারতেও যাচ্ছে। তাই দামও অনেক চড়া। এসব মাছ ঢাকার মোকামে নিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হয়। দাদনের ফাঁদে ফেলে গরিব জেলেদের দিয়ে জাটকাসহ রেণুপোনা ধরানো হচ্ছে। তাঁদের সহায়তা করছেন মৎস্য বিভাগ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন।
মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, ভোলার মৎস্য আড়তদারের ৯০ শতাংশ ক্ষমতাসীনেরা দলের সমর্থক। বাকি ১০ শতাংশও কোনো না কোনোভাবে প্রভাবশালী। এসব প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অবৈধভাবে জাটকাসহ মাছের রেণু ধরছেন। আর মৎস্য অধিদপ্তর ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো মাসিক কিস্তিতে মাসোহারা আনছে। এবার মন্ত্রণালয়ের এক সচিব ভোলায় আসায় মার্চের প্রথম ১৫ দিন কয়েকটি অভিযান চলেছে। পরে আর তেমন অভিযান হয়নি।
সমিতির জেলা সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, সরকারের উচিত সব কার্ডপ্রাপ্ত জেলের জন্য চাল বরাদ্দ ও রেশনিং পদ্ধতি চালু করা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রেজাউল করীম বলেন, ‘আমরা মার্চের প্রথম দিন থেকে অভিযান চালাচ্ছি। তা এখনো চলছে। এ পর্যন্ত ২৫৫টি অভিযান ও ১১৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় ৮০২টি বেহুন্দি ও ৪৮ লাখ ৫২৫ হাজার মিটার অবৈধ জাল জব্দ হয়েছে। মামলা হয়েছে ৫৮টি, বিভিন্ন মেয়াদে জেল হয়েছে ২০ জন জেলের এবং ৫ লাখ ৪ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১ লাখ ২ হাজার ২২৮ জন নিবন্ধিত জেলের মধ্যে ৫২ হাজার ১৫০ জনকে ৪০ কেজি করে চার মাস (ফেব্রুয়ারি-মে) চাল দেওয়া হবে। চাল বিতরণে কেন বিলম্ব হচ্ছে, তা প্রশাসন বলতে পারবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাং সেলিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন অভিযান চলছে। চাল বিতরণের জন্য মার্চের প্রথমে উপজেলা পর্যায়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারপরও কেন জেলেরা চাল পাচ্ছেন না, তা খতিয়ে দেখা হবে।